1. mtim30408@gmail.com : Khondokar Rakibul : Khondokar Rakibul
  2. admin@campus24.news : campus24news :
  3. khondokarrakibit5@gmail.com : Khandkar Rakibul Islam : Khondokar Rakibul Islam
  4. mdnajmulhasan8652@gmail.com : mdnajmulhasan hasan : mdnajmulhasan hasan
  5. mdriponsaharia@gmail.com : mdriponsaharia saharia : mdriponsaharia saharia
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৪:১১ অপরাহ্ন

ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে শহীদ হওয়া প্রথম মুসলিম তিতুমীর

  • প্রকাশিত : সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ২১ বার পাঠ করা হয়েছে

মো. ওমর ফারুক : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে শহীদ হওয়া প্রথম মুসলিম সৈয়দ মীর নীসার আলী তিতুমীরের ২৪৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি বিবিসির জরিপকৃত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০ জন বাঙালির মধ্যে ১১তম স্থান দখল করে আছেন।

পুরো নাম সৈয়দ মীর নীসার আলী তিতুমীর হলেও তিনি তিতুমীর নামেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

সৈয়দ মীর নীসার আলী তিতুমীরের জন্ম ২৭ জানুয়ারি ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে। বাবা সৈয়দ মীর হাসান আলী এবং মা আবিদা রোকেয়া খাতুন।

তিতুমীরের পরিবারের লোকেরা নিজেদের হযরত আলীর (রাঃ) বংশধর বলে দাবি করতেন। তাঁর এক পূর্বপুরুষ সৈয়দ শাহাদাত আলী ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে বাংলায় আসেন।

গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিতুমীর স্থানীয় এক মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। তিনি ছিলেন কুরআনের হাফেজ এবং বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষ এবং আরবি ও ফার্সি সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগী। তিনি ইসলামি ধর্মশাস্ত্র, আইনশাস্ত্র, দর্শন, তাসাওয়াফ ও মানতিক বিষয়ে সুপন্ডিত ছিলেন। মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে তিতুমীর একজন দক্ষ কুস্তিগীর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।

পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে মক্কায় অবস্থানকালে তিতুমীর মুক্তি সংগ্রামের পথপ্রদর্শক ও বিপ্লবী নেতা সাইয়িদ আহমদ বেরেলীর সান্নিধ্য লাভ করেন। সাইয়িদ আহমদ তাঁকে বাংলার মুসলমানদের অনৈসলামিক রীতিনীতির অনুশীলন এবং বিদেশি শক্তির পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।

১৮২৭ সালে মক্কা থেকে দেশে ফিরে তিতুমীর সমাজ সংস্কারে আত্মনিয়োগ করেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আবদুল মমিন চৌধুরী বলেন, “তিতুমীর একজন সমাজ ও ধর্মীয় সংস্কারক হিসেবে জীবন শুরু করেছিলো।”

তিনি আরও বলেন, “তখন মুসলমান সমাজ বিদআত এবং শিরকে জরাজীর্ণ ছিলো, মূলত সেগুলো দূর করার উদ্দেশ্য নিয়েই তিতুমীর কাজ শুরু করেছিলো। পরবর্তীতে এই ধর্মীয় ও সামাজিক প্রেক্ষাপট একটা অর্থনৈতিক ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিলো।”

তিনি সমাজের মুসলমানদের মধ্যে ইসলামি অনুশাসনের প্রচারের লক্ষ্য “তরিকাহ-ই-মুহম্মদিয়া” নামে একটি ধর্মীয় আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ধুতির বদলে ‘তাহ্বান্দ’ নামে এক ধরনের বস্ত্র পরিধান শুরু করেছিলেন।

তিতুমীর হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায় কর্তৃক মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত ‘দাঁড়ির খাজনা’ এবং মসজিদের উপর আরোপিত করের তীব্র বিরোধিতা করেন। এতে করে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের সাথে স্থানীয় জমিদার ও নীলকর সাহেবদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হতে থাকে।

তিতুমীর তাঁর অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলেন। ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর বারাসতের কাছে বাদুড়িয়ার ১০ কিলোমিটার দূরে নারিকেলবাড়িয়ায় তিনি বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন।

অচিরেই মুসলমানদের প্রতি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং তাদের উপর অবৈধ কর আরোপের জন্য হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে তিতুমীরের সংঘর্ষ বাঁধে। অন্যদিকে কৃষকদের উপর জমিদারদের অত্যাচার প্রতিরোধ করতে গিয়ে আরও বেশ কিছু জমিদারের সঙ্গেও তিতুমীর সংঘর্ষে লিপ্ত হন।

এসব অত্যাচারী জমিদার ছিলেন গোবরডাঙার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, তারাগোনিয়ার রাজনারায়ণ, নাগপুরের গৌরীপ্রসাদ চৌধুরী এবং গোবরা-গোবিন্দপুরের দেবনাথ রায়।

এ প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলা এবং কৃষকদের নিরাপত্তা দানের লক্ষ্যে তিতুমীর এক মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে তাদের লাঠি ও অপরাপর দেশিয় অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ দান করেন। তাঁর অনুসারী ও ভাগ্নে গোলাম মাসুমকে বাহিনীর অধিনায়ক করা হয়। তিতুমীরের শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে জমিদারগণ তাঁর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ সৃষ্টি এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইংরেজদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালায়।

গোবরডাঙার জমিদারের প্ররোচনায় মোল্লাহাটির ইংরেজ কুঠিয়াল ডেভিস তাঁর বাহিনী নিয়ে তিতুমীরের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন এবং যুদ্ধে পরাজিত হন।

তিতুমীরের সঙ্গে এক সংঘর্ষে গোবরা-গোবিন্দপুরের জমিদার নিহত হন। বারাসতের কালেক্টর আলেকাজান্ডার বশিরহাটের দারোগাকে নিয়ে তিতুমীরের বিরুদ্ধে অভিযান করে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। এ সময়ে তিতুমীর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারের নিকট জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি।

অন্যদিকে তিতুমীরের বাহিনীতে সৈনিক সংখ্যা অল্পসময়ের মধ্যে পাঁচ হাজারে উপনীত হয়। তিতুমীর সামরিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, “কৃষকদের নিয়ে গঠিত তিতুমীরের আন্দোলন অল্প কিছুদিনের মধ্যে গণআন্দোলনে রূপ নেয়।”

তিতুমীর চব্বিশ পরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলায় স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাকি ও গোবরডাঙার জমিদারগণ ইংরেজদের শরণাপন্ন হলে কলকাতা থেকে এক ইংরেজ বাহিনী তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরিত হয়। কিন্তু ইংরেজ ও জমিদারদের সম্মিলিত বাহিনী তিতুমীরের বীর বাহিনীর নিকট শোচনীয় পরাজয় বরণ করে।

অবশেষে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে ১০০ অশ্বারোহী, ৩০০ স্থানীয় পদাতিক, দুটি কামানসহ গোলন্দাজ সৈন্যের এক নিয়মিত বাহিনী তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন।

১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর ইংরেজ বাহিনী বাঁশের কেল্লার উপর আক্রমণ চালায়। কামান ও আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীকে তিতুমীর তাঁর স্থানীয় অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে বাঁশের কেল্লায় আশ্রয় নেন। ইংরেজরা কামানে গোলাবর্ষণ করে কেল্লা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দেয়। তিতুমীরের বিপুল সংখ্যক সৈনিক প্রাণ হারায়।

কয়েকদিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯ নভেম্বর নারিকেলবাড়িয়ায় বহুসংখ্যক অনুসারীসহ তিতুমীর শহীদ হন। অধিনায়ক গোলাম মাসুমসহ ৩৫০ জন বিপ্লবী সৈনিক ইংরেজদের হাতে বন্দি হন। গোলাম মাসুম মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং ১৪০ জন বন্দিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সিংহপুরুষ ও দেশপ্রেমিক তিতুমীরের এই আন্দোলন দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তিতুমীরের অবদানের জন্য এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ

তিতুমীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশে তাঁর নামে বেশ কিছু জায়গার নামকরণ করা হয়েছে। যেমন:-

১৯৭১ সালে রাজধানীর “মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কলেজ” এর নাম পরিবর্তন করে “সরকারি তিতুমীর কলেজ” নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর একটি ছাত্রাবাসের নাম “তিতুমীর হল” রাখা হয়।

খুলনা শহরে রূপসা নদীর তীরে ”বানৌজা তিতুমীর” নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি কমিশন রয়েছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি জাহাজের নামকরণ করা হয় “বিএনএস তিতুমীর।”

এছাড়াও রাজশাহী ও নীলফামারী জেলার চিলাহাটি স্টেশনের মধ্যে ”তিতুমীর এক্সপ্রেস” নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২৫  
কারিগরি সহযোগিতায়: জাগো হোষ্টার বিডি