মোঃআশিকুল ইসলাম
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাহগের এক দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে এবার সংহতি জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন বিশ জনেরও বেশি শিক্ষক। এ সময় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে শিক্ষকদের অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে শেষ হয়।
শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিন, কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজ আশরাফুল হক, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার, সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিকসহ অন্যান্যরা। এছাড়াও, “কাজ নেই, মজুরি নেই” ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারীরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজন চন্দ্র পাল এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান সহযোগী অধ্যাপক ড. গাজী জহিরুল ইসলাম আজ পদত্যাগ করেছেন। এর আগে, দুটি হলের প্রভোস্ট – শেরে বাংলা হলের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম বাছির ও বিজয়-২৪ হলের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান এবং জীবনানন্দ দাশ রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক সঞ্জয় কুমার সরকার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, “আগামীকাল গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা জেনেছি যে ভর্তি পরীক্ষায় উপাচার্যের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়। তাই, উপাচার্যকে কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবে, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব।”
শিক্ষার্থীদের সকল দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিন বলেন, “আমাকে একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট সভা থেকে বেআইনিভাবে ও সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে অপমানজনকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অন্যায়। আমাদের প্রতিষ্ঠানের আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কীভাবে কাউকে এসব পদে অন্তর্ভুক্ত বা অব্যাহতি দেওয়া যাবে। অথচ সেই আইনকে উপেক্ষা করে, কোনো আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই আমাকে অপসারণ করা হয়েছে। এ ধরনের আচরণ প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচার ও দমননীতির স্পষ্ট প্রমাণ।”
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সাবেক প্রক্টর এটিএম রফিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “শিক্ষার্থীদের নামে যে মামলা দেওয়া হয়েছে, তার সাথে আমি একমত নই। আমি তখন প্রক্টর ছিলাম, কিন্তু মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। সম্প্রতি একটি জিডি হয়েছে, এর সাথেও আমি কোনোভাবেই একমত নই। আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা কেন মামলা খাবে? তাদের ভবিষ্যৎ আছে, তাদের জীবনে কেন কলঙ্কের দাগ লাগবে? আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিন স্যারকে সম্প্রতি একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিটা আমি পড়েছি, এবং এই ধরনের ভাষা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতেই আজ আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি।”
এ বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি জানার জন্য প্রক্টর ড. সোনিয়া খান সোনিকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান এবং কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে, সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি
Leave a Reply