নুসরাত নাঈম সাজিয়া, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি
কয়েক মাসের ব্যবধানে আবারও ল্যাপটপ চুরির অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসে। পরপর এমন চুরির ঘটনায় ছাত্রাবাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে, পাশাপাশি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কে প্রশাসনের ব্যর্থতা বলেও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (৪ মে) ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ভবনে ( সি-ব্লক) ল্যাপটপ চুরির ঘটনা ঘটে। চুরির বিষয়টি ছাত্রাবাসের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের মোঃ রায়হান সরকার। তিনি ছাত্রাবাসের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ভবনের ( সি-ব্লক) ১০৬ নাম্বার রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, গতকাল রাতে ল্যাপটপ ব্যবহারের পর প্রতিদিনের ন্যায় তিনি ল্যাপটপ যথাস্থানে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার ল্যাপটপটি সেই স্থানে নেই। পরবর্তীতে বিষয় স্যারদের অবগত করা হলে সিসিটিভির মাধ্যমে দেখা যায় একজন বহিরাগত ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ তার রুমে ঢুকে ল্যাপটপ নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, যারা গেটম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন তারা একটু গভীর রাত হলেই বাসায় চলে যান এবং দেখা যায় ভোর পর্যন্ত কোনো গেটম্যান থাকে না এমনকি এর আগেও এমন চুরির ঘটনা ঘটেছে। তিনি প্রশাসনের নিকট আহ্বান জানান যাতে তার এই চুরির বিষয়ে আশানুরূপ একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং ছাত্রাবাসের নিরাপত্তা যেন আরো জোরদার করা হয়।
এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ (আবির) বলেন, রাজশাহী কলেজ প্রশাসন ও হোস্টেল প্রশাসন বারবার তার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত হোস্টেল থেকে ল্যাপটপ চুরি, টাকা চুরির ঘটনা তুচ্ছ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাদের কোন মাথা ব্যথাই নেই, নেই কোন জবাবদিহি! এভাবে আর কত????
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ছাত্রাবাসে নেই পর্যাপ্ত গেটম্যান, নেই কোন শৃঙ্খলা। হোস্টেল থেকে ল্যাপটপ চুরি, ফোনচুরি, হওয়ার পরেও সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশন নেই??
রাজশাহী কলেজের হোস্টেলে অনেক গরীব মানুষের সন্তানরা লেখাপড়া করে এবং ল্যাপটপ দিয়ে তারা অনলাইনে কাজ করে সাময়িক কিছু টাকা ইনকাম করে তা দিয়ে পড়ালেখার খরচ বহন করে। কিন্তু এভাবে বারবার তাদের জিনিসগুলো চুরি হয়ে গেলে এর ভর্তুকি কি কলেজ প্রশাসন দেবে??
তিনি আরো বলেন, এইবার যদি কলেজ প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ না নেয়, তাহলে প্রয়োজনে আমরা সাধারণ ছাত্রদেরকে নিয়ে আন্দোলন করতে বাধ্য হব।
রাজশাহী কলেজ শাখার ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কে নিয়ে থানায় জিডি করেছেন এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর চুরির বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানান।
এ বিষয়ে মুসলিম ছাত্রাবাসের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক আবু জাফর মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা যেভাবে রাখতে চাই সেভাবে তো ছাত্ররা মানতে চায়না। আমরা বলি যে হোস্টেলের গেইট রাত ১২ টা থেকে ভোর অবধি বন্ধ রাখব, স্টুডেন্টরা এটা মানেনা ,তারা যেকোনো সময় যাতায়াত করে।
তিনি বলেন, কয়েকমাস আগে চুরি হলো সি ব্লকে । এর জন্য বারান্দায় যে তিনটা গেইট আছে সেগুলোতে তালা লাগানোর ব্যবস্থা করা হলো। সব স্টুডেন্ট দের চাবি দেওয়া হলো। ছয়মাস হয়নি বারান্দার দরজা খোলা রাখা হচ্ছে। তার ফলেই এরকম হচ্ছে বলে মনে করি।
উল্লেখ্য গত ২১ ডিসেম্বর ছাত্রাবাসের একই ভবনের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু রায়হানের ল্যাপটপ চুরির হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন পার হলেও তার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
Leave a Reply