মাহমুদা আক্তার,জাককানইবি :
জাককানইবি তথা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। আন্দোলনে সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আশিকুর রহমান। এই মামলায় মোট ২১০ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতারা।
মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থী—সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মো. আজিজুল ইসলাম (২০১৮-১৯), থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের লিমন আহমেদ (২০২০-২১) এবং আইন ও বিচার বিভাগের শরিফুল ইসলাম সংগ্রাম (২০১৯-২০)—মামলাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।
সংগ্রাম বলেন, “আমরা তখন রাজপথে ছিলাম, গুলির মুখে আন্দোলন করেছি। অথচ আজ সেই আন্দোলনের সৈনিকদেরই আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে—এটা চরম লজ্জার। আমি আগে ছাত্রলীগ করলেও ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই পদত্যাগ করেছি। আন্দোলনে আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছি, কারও ক্ষতি করিনি।”
মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, “যিনি মামলা করেছেন, তাকে আমি চিনি না, তিনি সম্ভবত আমাকেও চেনেন না। মামলায় আমার নাম পর্যন্ত ভুল রয়েছে। ৪ আগস্ট ক্যাম্পাসে বাধা সত্ত্বেও আমরা আন্দোলনে অটল ছিলাম। আমাদের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষকও ছিলেন, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।”
লিমন আহমেদ বলেন, “১৬ জুলাই আম্মুকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম, আন্দোলনে যাচ্ছি—ফিরতে পারবো কিনা জানি না। তখন ছাত্রলীগের হুমকি পেয়েছিলাম, এখন ছাত্রদলের মামলা খাচ্ছি। যে ব্যক্তি মামলা করেছেন, তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এ মামলা রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ।”
এর আগে ৫ মে, ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল (দ্রুত বিচার) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. আশিকুর রহমান। বিচারক নাসিমা খাতুন মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলায় ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাকিবুল হাসান রনিকে।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট ‘হাসিনায় আস্থা’ ব্যানারে এক সশস্ত্র মহড়ার পরদিন আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ চালানো হয়। এতে অন্তত ১২ জন আহত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এ মামলা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হয়রানি এবং আন্দোলনের গৌরব নস্যাৎ করার অপচেষ্টা। একইদিন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আজিজুল ইসলাম উপাচার্যের কাছে মামলা প্রত্যাহারের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন জমা দেন।
Leave a Reply