ইবি প্রতিনিধি:
দেশের বরেণ্য নজরুল গবেষক ও বাংলা দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেছেন, “নজরুর চিন্তায়ও যেমন ছিলেন তার কর্মেও তেমনটি প্রতিফলন ঘটেছে। তার যে সর্বমানবিকতা বোধ অর্থাৎ নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান সবার ব্যক্তিক ও সামষ্টিক সত্তার ‘অভেদসুন্দর’ সাম্য সৃষ্টি করেছিলেন সেটা বিশ্ব সাহিত্যে খুবই গৌরবের। তাইতো তিনি চিরসুন্দর সাম্যবাদী কবি, সাম্যবাদের কবি।
মঙ্গলবার (২১ মে) বেলা ১১ টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘নজরুল জয়ন্তী’-২০২৫ উপলক্ষ্যে সেমিনার ও আলোচনানুষ্ঠানে মূখ্য আলোচকের বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগীতায় ছিল বাংলা বিভাগ।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, “কাজী নজরুল বাঙালির স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কতগুলো সূচক বক্তব্য দিয়েছেন। ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, বাঙালি যেদিন এক হয়ে বলতে পারবে বাঙালির বাংলা, সেদিন সে অসাধ্য সাধন করবে। বাঙালি একাই সেদিন ভারত স্বাধীন করবে। স্বাধীনতার জন্য আমাদের কী করতে হবে, এই প্রবন্ধের শেষ দিকে নজরুল তার উপায় বাতলেছেন। তার মত হলো, বাঙালিকে তার বীরসত্তার প্রকাশ ঘটাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশ থেকে মানবিক বৈষম্য দূর করা দরকার। এখানে নানা বিষয়ে নানা মত-পথ থাক, মানবিক বৈষম্য দুর করতে কবি, বুদ্ধিজীবী, সুশীল, রাজনীতিক, লেখক, সংস্কৃতিকর্মীসহ সবার এক জায়গায় আসতে হবে। সেই পরিবেশ বজায় রাখতে না পারলে আমরা আবার ভুল পথে হাঁটব। আর এটা হলে তা হবে দেশের নতুন বিপ্লবের আকঙ্খার মৌলিক আদর্শের বিরুদ্ধাচরণ।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “আমাদের জাতীয় কবি কবি নজরুল তার সাহিত্যের ভাববস্তুতে সাম্য, মানুষের মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছিলেন। যেখানে প্রপঞ্চ হিসেবে আত্মশক্তি’ ছিল ভিত্তিভূমি। তিনি সবসময়ই মানুষকে জাগাতে চেয়েছিলেন এবং বাঙালী বারবার নজরুল দ্বারা উজ্জীবিত হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই ২৪’শ ও ছিল নজরুল দ্বারা উদ্দীপিত।”
তিনি আরো বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা যেসব মূল্যবোধ আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম, তার সবকিছুই নজরুল-সাহিত্য বা নজরুলের মূল্যবোধের মধ্যে বিদ্যমান। তাই তাকে আমরা জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিলাম। তবে স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে এসে আজ যদি হিসাব করি, কতটা পৌঁছাতে পারলাম সেই মূল্যবোধের কাছে, অনেকটা হতাশা হতে হবে বৈকি। তিনি সবাইকে নজরুল চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান।”
অনুষ্ঠানে বাংলা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো: মনজুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম এয়াকুব আলী, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এমতাজ হোসেন।
প্রসঙ্গত, আবদুল হাই শিকদার বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। তিনি পাঠকপ্রিয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দুই বারের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এছাড়াও তাঁর লেখা বই ও গবেষণা পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রায় সব অঙ্গনে তার রয়েছে সরব পদচারণা। তবে কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। মানবতা স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারক এই কবির মুখে সবসময় ধ্বনিত হয়েছে প্রেম, প্রকৃতি, বিশ্বমানবতা, শোষণমুক্ত সমাজ ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের কথা। তার লেখনীতে বাংলাদেশের জাতিসত্তা ও বিশ্বমানবতার কথা প্রকাশ পাওয়ায় কবি আবদুল হাই শিকদারকে ‘জাতিসত্ত্বার কবি’ও বলা হয়ে থাকে।
Leave a Reply