নিশান খান
জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে গত এপ্রিলে দুই ধাপে চারটি করে মোট ৮টি ইলেকট্রিক কার্ট-গাড়ি চালু করেছিল প্রশাসন। উদ্বোধনকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছিল, দ্রুতই শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থার সহজীকরণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কার্ট যুক্ত করা হবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন করে কার্ট গাড়ি যুক্ত হওয়ার বদৌলতে উদ্বোধন করা ৮টির মধ্যে ৪টি গাড়ি ফেরত নিয়ে গেছে সরবরাহকারী কোম্পানি। যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে তারা গাড়িগুলো ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও মূলত অলাভজনক হওয়ায় গাড়ি ফিরিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, পূর্বে যাতায়াতের জন্য ব্যাটারি চালিত রিকশা ব্যবহার করতো শিক্ষার্থীরা। তবে গত বছরের নভেম্বরে ব্যাটারি চালিত রিকশার ধাক্কায় প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী নিহতের জেরে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ আন্দোলন করলে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে যাতায়াতের সুবিধার্থে পায়ে চালিত রিকশা ও শাটল বাসের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। তবে পায়ে চালিত রিকশার অতিরিক্ত ভাড়া ও সময়মতো শাটল বাস না পাওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার শুরু করলে ও আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক কার্ট চালুর কথা জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে দুই ধাপে ৮টি কার্ট চালু হয়। তবে একমাস না পেরুতেই এর মধ্যে চারটি গাড়ি ফেরত নিয়ে গেছে সরবরাহকারী কোম্পানি।
এদিকে যাতায়াতের সুবিধা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবহার করা হয়। ফলে ক্যাম্পাসে যাতায়াতকারীর সংখ্যা ২০ হাজারেরও অধিক। এতো সংখ্যক মানুষের যাতায়াতের জন্য এই অল্প কয়েকটি কার্ট কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি পায়ে চালিত রিকশার অত্যধিক ভাড়া ও সংখ্যা কম হওয়ায় যাতায়াতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একটি গ্রুপে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি হুইলচেয়ারে করে সমাজবিজ্ঞানে যাই এবং আসি। আজকে সকালে ভাবলাম কার্টে করে যাই। ১৫-২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরে দেখি যে কার্ট যেটা আসে সেটা ভরা, স্থান সংকুলান হয় না। তারপরে কি আর করার হুইলচেয়ারে যাই। অটোরিকশা বন্ধ করার পরে ক্লাস বা কোনো প্রয়োজন ডেইরি গেটে যেতে হইলে যে কষ্টটা হয় তা আর নাই বলি! আপনারা তো পা দিয়ে হাঁটেন আর আমি তো হুইলচেয়ারে বোঝেন কষ্টটা। রিকশায় আমি উঠি না কারণ এতো টাকা পাবো কই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে চারটি কার্ট কোম্পানি ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। আমি অসুস্থ থাকায় এ ব্যাপারে তাদের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। যোগাযোগ করে জানাতে পারবো। তবে কিছু শিক্ষার্থী জানিয়েছে লাভজনক না হওয়ায় কোম্পানি গাড়ি ফেরত নিয়ে গেছে।
Leave a Reply