মোহাম্মদ জোবাইর হোসাইন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিমের কক্ষ যেন ছাত্রদলের অস্থায়ী কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে, তবে বিভিন্ন সময় তাঁর কক্ষে নিয়মিত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়। এতে বিব্রত হচ্ছেন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
প্রতিদিনই ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন, সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল বাশার ও শাফায়েত সজলসহ নেতারা ওই কক্ষে যাতায়াত করেন। তাঁরা ক্যাম্পাস রাজনীতির নানা বিষয়ে আলোচনা করে থাকেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ শেষে নেতাকর্মীদের ড. শরীফুল করিমের কক্ষে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে দেখা যায়। এছাড়া গত ১৫ মে বিএনপি-সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন ইউট্যাবের কুবি শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহিন উদ্দিন মনোনীত হলে, তাঁকে ড. করিমের কক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ছাত্রদল নেতারা।
বিভাগের এক সিনিয়র শিক্ষক জানান, “এই নেতাদের অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই। তাঁরা নিয়মিত বিভাগে এসে শিক্ষকদের বিব্রত করেন।”
শরীফুল করিম বিভাগীয় প্রধান হওয়ায় এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি কোন শিক্ষার্থী,একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শরীফুল করিম বিভাগীয় প্রধান হওয়ায় এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি কোন শিক্ষার্থী,সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির কারণে স্যারের আগের সুনাম এখন আর নেই। তিনি যেন এখন ফুল-টাইম রাজনীতিবিদ, পার্ট-টাইম শিক্ষক। তাঁর কক্ষে নিয়মিত ছাত্রদলের নেতারা বসেন, বৈঠক করেন, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ১০০তম সভায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এখনো ছাত্রদল প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে সক্রিয় রয়েছে। জানা যায়, মোস্তাফিজুর রহমান শুভ ড. শরীফুল করিমের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং তাঁকে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদলীয় শো-ডাউনে অংশ নিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, “আমি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। বিভাগে যাওয়া আমার অধিকার। আমরা যখন যাই, পরামর্শের জন্য যাই।”
অভিযোগ সম্পর্কে ড. শরীফুল করিম বলেন, “শুভ আমার ছাত্র। তার ছাত্রত্ব না থাকলেও বিভাগের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। আমার কক্ষে শুধু ছাত্রদলের নয়, অন্য দলের ছাত্ররাও আসে। এখানে আমার দৃষ্টিতে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম হয় না। কারও পারসেপশন ভিন্ন হলে সেটা তার বিষয়।”
বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘ইউট্যাবের’ সাধারণ সম্পাদকক মাহিন উদ্দিনকে ফুল দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “তিনি পাশের বিভাগের শিক্ষক, তাই এসেছেন। ছাত্রদল নেতারাও তখন এসেছেন—এটা কাকতালীয়।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, “শিক্ষকের কক্ষে দলীয় নেতাদের যাতায়াত অনুচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ। শিক্ষকেরা রাজনীতিতে যুক্ত হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”
উল্লেখ্য, ড. শরীফুল করিমের বিরুদ্ধে শিক্ষককে মারধর ও হেনস্তা, নিয়োগে অনিয়মসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ ইতোমধ্যে রয়েছে।
Leave a Reply