জাবি প্রতিনিধি,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের দুর্বৃত্ত আখ্যা এবং রোপনকৃত গাছ ভাঙার অভিযোগ উঠেছে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
গত ১৪ মে শহীদ সালাম বরকত হলের শিক্ষার্থীরা বৃক্ষরোপণ করে আসলে এর পরদিন ১৫ মে গাছগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এর আগে শহীদ সালাম বরকত হলের শিক্ষার্থীদের দুর্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দেয়। এতে বলা হয়, গত বুধবার (১৪ মে) দুপুর নাগাদ চারুকলা বিভাগের নির্মাণাধীন ভবনে হামলা ও ভাংচুর করেছে শহিদ সালাম-বরকত হলের কিছু শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং হামলাকারীদের ‘দুর্বৃত্ত’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে, শহীদ সালাম বরকত হলের শিক্ষার্থীরা বৃক্ষরোপণ করতে গেলে তাদেরকে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত ও গে আখ্যা দিয়ে রোপনকৃত বৃক্ষ ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ শোনা গেছে।
গত ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে চারুকলা ভবনের জন্য আলবেরুনি এক্সটেনশনের পরিবর্তে প্রান্তিকের দিকে যায়গা দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও কোন লিখিত বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রকাশ করেনি। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ৬ মাসের মধ্যে পরিবর্তন করার আইনী বিধান না থাকলেও, বিশেষ মহলের চাপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন বহির্ভূতভাবে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।
অন্যদিকে, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি, বিগত ৫ আগস্ট ২০২৪-এ কিছু অংশীজনের আপত্তির প্রেক্ষিতে চারুকলা ভবনের নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়। আপত্তির পেছনে যুক্তি ছিল যে, নির্মাণকাজে নাকি প্রাণ-প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে। তবে চারুকলা শিক্ষার্থীদের মতে, এই যুক্তিগুলো ছিল ভিত্তিহীন ও ভ্রান্ত।
এছাড়াও, পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি যাচাই করতে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ জমা দেওয়া রিপোর্টে জানায়—আল বেরুনি হলের বর্ধিত অংশে চারুকলা ভবন নির্মাণে প্রকৃতি বা শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কোনো ক্ষতি হবে না। এমনকি প্রতিবেদনটিতে ভবন নির্মাণের পক্ষে যৌক্তিক প্রমাণ ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়।
তারা উল্লেখ করে, এরই ধারাবাহিকতায়, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—নির্ধারিত স্থানেই চারুকলা ভবনের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ১৪ মে কিছু শিক্ষার্থী নির্মাণকাজে বাধা সৃষ্টি করে, নির্মাণ সামগ্রী ভাঙচুর করে এবং নির্মাণকারীদের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। চারুকলা শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-শৃঙ্খলার চরম লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছে। এক স্মারকলিপিতে চারুকলা শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সেইসঙ্গে নির্মাণাধীন ভবনে হামলার ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
এ বিষয়ে শহিদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থী মাইক্রোবায়োলজি ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে চারুকলা ভবনের জন্য স্থান আলবেরুনি এক্সটেনশন থেকে সরিয়ে প্রান্তিকের দিকে দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও কোন লিখিত বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রকাশ করেনি। আমরা গত ১৪ কে ঐ স্থানের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফেরানোর লক্ষে বৃক্ষরোপণ করতে যাই।কিন্তু সেখানে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার বাহানায় উপস্থিত হয়ে আমাদেরকে বাধা দেয়। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমাদেরকে জঙ্গি,সন্ত্রাসী, দূর্বৃত্ত ইত্যাদি আখ্যা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার এসব ঘটনার সাক্ষী। তারা স্যারের সামনেই এসব কাজ করে। পরবর্তীতে প্রক্টর স্যার তাদেরকে সরিয়ে আমাদেরকে গাছ লাগাতে বলে। আমরা গাছ লাগানোর পরে চারুকলার শিক্ষার্থীরা সেগুলো ভেঙ্গে দেয়। তারাই মূলত সন্ত্রাস করেছে।’
‘শহীদ সালাম-বরকত হলের আরেক শিক্ষার্থী আদিব বলেন, আমরা শহিদ সালাম বরকত হলের শিক্ষার্থীরা ওই সংরক্ষিত জায়গায় বনায়নের উদ্দেশ্য বৃক্ষরোপন করি কিন্তু রাতের অন্ধকারে সকল গাছ ভেঙ্গে ফেলেছে কারা সে বিষয়ে স্পষ্ট বলতে পারছি না; আমরা এটিও জেনেছি রাতের অন্ধকারে কিংবা বিভিন্ন সময়ে চারুকলার শিক্ষার্থীরা এখানে নিয়মিতই যাতায়াত করে এতে বোঝায় যাচ্ছে কারা গাছগুলো ভেঙ্গে ফেলেছে!
দুর্বৃত্ত বলে অ্যাখ্যার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বলেন, তারা নিজেরাই আমাদেরকে গালিগালাজ, নানা অঙ্গভঙ্গি করেছে, এবং আমাদের হলের ছাত্রদের কে সমকামী বলে অ্যাখ্যায়িত করেছে। এই বিষয়ে প্রতিটি শব্দের আমরা অফিসিয়ালি জবাব দিব।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৪ মে শহিদ সালাম বরকত হলের শিক্ষার্থীরা বৃক্ষরোপণ করতে গেলে চারুকলা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গি করে এবং গালিগালাজ করে।
Leave a Reply