প্রতিবেদক :-সাব্বির
ঐতিহ্যবাহী তা’মীরুল মিল্লাতের ছাত্রাবাসগুলোর মধ্যে জ্ঞান ও যুক্তির চর্চাকে উৎসাহিত করার প্রয়াসে তা’মীরুল মিল্লাত টঙ্গী ডিবেটিং ক্লাব (টিএমডিসি) গতকাল , ২০২৫ তারিখে এক মনোমুগ্ধকর প্রীতি বিতর্ক অধিবেশনের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের দুটি স্বনামধন্য ছাত্রাবাস – “শরিয়তুল্লাহ হল” এবং “তিতুমীর হল” – অংশগ্রহণ করে। বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের এক প্রাণবন্ত পরিবেশে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যা ছাত্র-শিক্ষক সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
অধিবেশনের স্পিকারের গুরুদায়িত্ব পালন করেন টিএমডিসি-এর সম্মানিত প্রেসিডেন্ট আদিল বাদশাহ। তাঁর সুনিপুণ পরিচালনায় বিতর্কটি একটি সুস্পষ্ট কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হয় এবং বক্তারা তাদের মূল্যবান যুক্তি উপস্থাপনের পর্যাপ্ত সুযোগ লাভ করেন।
বিচারকের আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন টিএমডিসি ডিবেটিং ক্লাবের তিন অভিজ্ঞ সদস্য। ক্লাবের সুযোগ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট জাকী তাহসীন বিতর্কের মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও, ক্লাবের সাবেক অফিস সেক্রেটারি ইসলামুল হক সৌরভ এবং বর্তমান চৌকস অর্গানাইজিং সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল ফাররাজ তাদের প্রজ্ঞা ও বিচারিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিতর্কের ফলাফল নির্ধারণে সহায়তা করেন। তাদের নিরপেক্ষ এবং সুবিবেচনাপূর্ণ মতামত বিতর্কটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য ও শিক্ষণীয় করে তোলে।
এবারের বিতর্ক অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রসঙ্গ: “এই সংসদ মনে করে যে, আওয়ামী লীগকে সাময়িকভাবে নয় বরং স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক।” এই স্পর্শকাতর এবং সময়োপযোগী বিষয়টি উত্থাপন করার ফলে উভয় দলের বক্তারা গভীর বিশ্লেষণ এবং জোরালো যুক্তিতর্কের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন।
শরিয়তুল্লাহ হলের বিতার্কিকরা যেখানে আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার পক্ষে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন, সেখানে তিতুমীর হলের বিতার্কিকরা এর বিপক্ষে শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করেন। তারা গণতন্ত্রের মূলনীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অন্যান্য বিকল্প রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন। উভয় দলের বিতার্কিকদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এবং তথ্যভিত্তিক উপস্থাপনা দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে তোলে।
দীর্ঘ এবং উত্তেজনাপূর্ণ যুক্তিতর্ক ও বিশ্লেষণের পর, বিচারকগণ তাদের সর্বসম্মত রায় ঘোষণা করেন। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে শেষ পর্যন্ত “তিতুমীর হল”-এর বিতার্কিক দল তাদের শক্তিশালী যুক্তি এবং সাবলীল উপস্থাপনার মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। তাদের জয় দর্শকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
এই প্রীতি বিতর্ক অধিবেশন শুধুমাত্র দুটি হলের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতাই ছিল না, বরং এটি ছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, যুক্তিবোধ এবং অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগানোর একটি চমৎকার উদ্যোগ। টিএমডিসি কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে এ ধরনের সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করে থাকে, যা শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই বিতর্ক অধিবেশন তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
অনুষ্ঠানের শেষে স্পিকার এবং বিচারকবৃন্দ বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানান এবং অংশগ্রহণকারী সকল বিতার্কিকের জ্ঞানদীপ্ত আলোচনা ও সাহসী অংশগ্রহণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই ধরনের বিতর্ক প্রতিযোগিতা টিএমডিসির ছাত্রদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং জ্ঞান অর্জনের স্পৃহাকে আরও উৎসাহিত করবে বলে আশা করা যায়।
Leave a Reply