জাককানইবি প্রতিনিধি:
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত হয়ে গেল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী।জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি।আর এই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
মঙ্গলবার (১৩ মে ২০২৫)অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরনো প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে। উদ্বোধনের পর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও কর্মের উপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা,যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
প্রধান অতিথি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্থান, কাল পাত্রের উর্ধ্বে উঠে কাজ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। রবীন্দ্রনাথের মধ্যে দার্শনিক চিন্তা, সমাজ চিন্তা সবকিছুই ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। বাংলা সাহিত্যকে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর সাহিত্য বিশ্ব সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, পত্রাবলী, স্মৃতিকথা, আত্মজীবনী, সঙ্গীত সাহিত্য সকল শাখায়ই তাঁর লেখনীতে সার্থকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। একাধারে তিনি সাহিত্য রচনা করেছেন সেই সাথে তিনি করেছেন পত্রিকা সম্পাদনা, ছিলেন সমাজ সচেতন এক দার্শনিক। তিনি ছিলেন শিক্ষানুরাগী, চিত্রশিল্পী এবং প্রজাভক্ত জমিদার।”
তিনি আরও বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু নিজেই নয় বরং অন্যদেরও প্রসিদ্ধ করেছেন। আমাদের দেশের হাছন রাজা ও লালন শাহ্ তাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁদের ছাড়াও আরও একজন কবি প্রতিভাকে বুঝতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অন্তদৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভা দেখতে পেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুঝেছিলেন নজরুলের প্রতিভা কোন সাধারণ প্রতিভা নয়, তাঁর প্রতিভা একদিন ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়বে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখা গ্রন্থ নজরুলকে উৎসর্গ করেছিলেন আবার নজরুলও তাঁর গন্থ রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেছিলেন।’ সবশেষে মাননীয় উপাচার্য কবির ভাষায় বলেন, ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর, তোমার মাঝে আমার প্রকাশ তাই এতো মধুর।”
এছাড়াও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্র-জয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা। রবীন্দ্র বক্তৃতামালায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র-গবেষক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সরওয়ার মুর্শেদ। এছাড়া বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স), থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. কামাল উদ্দিন এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইয়াত সিংহ শুভ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র-জয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির সদস্য-সচিব ও সঙ্গীত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. সুশান্ত কুমার সরকার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. জিল্লাল হোসেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অতঃপর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাহি সাম্যের গান মঞ্চে’ রম্য বিতর্ক, আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্যনাট্য: চণ্ডালিকা পরিবেশিত হয়। বর্ণাঢ্য এই সাংস্কৃতিক পর্বের পরিচালনায় ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সঙ্গীত বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ শাকিল হাসমী।
Leave a Reply