1. mtim30408@gmail.com : Khondokar Rakibul : Khondokar Rakibul
  2. admin@campus24.news : campus24news :
  3. khondokarrakibit5@gmail.com : Khandkar Rakibul Islam : Khondokar Rakibul Islam
  4. mdnajmulhasan8652@gmail.com : mdnajmulhasan hasan : mdnajmulhasan hasan
  5. mdriponsaharia@gmail.com : mdriponsaharia saharia : mdriponsaharia saharia
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৫ অপরাহ্ন

মাঘে বেড়েছে শীত আর কুয়াশার দাপট, বিপর্যস্ত জনজীবন

  • প্রকাশিত : বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ১৯ বার পাঠ করা হয়েছে

রংপুর প্রতিনিধি : রংপুর অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই হাড়কাঁপানো শীত আর হিমেল হাওয়ার তীব্রতায় কাঁপছে এ জনপদের মানুষ। বিশেষ করে গত তিন দিন ধরে রংপুর অঞ্চলে হঠাৎ শীতের চোট টের পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

শীতের তীব্রতার সঙ্গে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কখনো কখনো সূর্যের দেখা মিললেও ভোরবেলা উত্তরের আকাশ থাকছে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই কাঁপুনি দিয়ে অনুভূত হচ্ছে শীত। এমন শীতে বাড়ছে রোগ, সঙ্গে আগুন পোহাতে গিয়ে ঘটছে দগ্ধ হওয়ার ঘটনাও।

এদিকে মাঘের মাঝামাঝি শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত এ অঞ্চলের শীতার্ত অসহায় ও দরিদ্র মানুষজন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। নদ-নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে, যেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে পড়েছে শীতের প্রভাব।

শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের পাশাপাশি কুয়াশা বেশি হওয়ায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। এতে দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে। কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতির কারণে সড়কের কোথাও কোথাও ঘটছে ছোট ছোট দুর্ঘটনা।

শীতের কারণে লোকসানে পড়েছে কৃষক ও কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো। ব্যাহত হচ্ছে ধানের চারাসহ অন্যান্য ফসলের বীজ রোপণ ও কৃষি কাজ। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না, যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের দিতে হচ্ছে বেশি টাকা। এতে সার, বীজ ও সেচের সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের মজুরিতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।

এদিকে, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ। গত কয়েক দিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর পরিসংখ্যান।

রংপুর মহানগরীর আদর্শপাড়া এলাকার শাকিল মিয়া বলেন, তীব্র শীতের কারণে সকালবেলা শহরে মানুষের আনাগোনা খুব কম ‌তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ শহরমুখী হচ্ছেন। মূলত হাড়কাঁপানো শীত পড়লেও জীবিকার প্রয়োজনেই মানুষ যে যার কাজে যাচ্ছেন। এবার হঠাৎ মাঘের শীতের তীব্রতা একটু বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কামারপাড়া এলাকার সোহানা সিরাজ জানান, সাতসকালে উঠেই সন্তানদের স্কুলে রেখে আসতে হয়। গত কয়েক দিন থেকে ঠান্ডায় তার ছোট মেয়ে ও তিনি সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালেও গিয়েছিলেন।

এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন ছিন্নমূল ও অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষজন। শীতবস্ত্রের অভাবে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। রিকশাচালক ও ভ্যানচালকদের আয়-রুজি কমে গেছে।

শাপলা চত্বরে জটলা করে বসে থাকা কয়েকজন দিনমজুরের সঙ্গে কথা হয়। তাদের একজন জাকির হোসেন। যুবক বয়সী এ দিনমজুর বলেন, শীতে কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। অল্পতেই দিন শেষ হয়ে যায়, এজন্য অনেকেই কাজে নিতে চায় না। সকাল থেকে বসে আছি, এখন ১০টা বাজে। আজকে কাজ না পেলে কষ্ট হবে। সংসারের খরচাপাতি ও কিস্তি নিয়ে বিপাকে আছি।

এদিকে, কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ার প্রভাবে রংপুরের ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে গেছে। এই সময় শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষত, শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি, শীত নিবারণে আগুন জ্বালানোর ফলে অনেকেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গত এক মাসে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চারজন মারা গেছেন এবং ৪০ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক মাহফুজার রহমান বাঁধন বলেন, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। শীতজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় সহস্রাধিক শিশু গত ৭-৮ দিনে ভর্তি হয়েছে। শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কের কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পরানো জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের শীত না লাগে। তবে বেশি অসুস্থ মনে হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের এ তীব্রতা আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে রংপুর জেলার জনসংখ্যা প্রায় ত্রিশ লক্ষাধিক, এর মধ্যে শীতার্ত মানুষের সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে শুধু রংপুর মহানগরীতেই বাস করেন প্রায় ৭০ হাজার ভাসমান নারী-পুরুষ। এরা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতের বারান্দা আর ফুটপাতে রাত কাটান। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

একইভাবে জেলার আট উপজেলা বিশেষ করে তিস্তা, ঘাঘট, করতোয়া, যমুনেশ্বরী বিধৌত চরাঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার শীতে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগ মানুষের কাছে এখনো শীতবস্ত্র পৌঁছেনি।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, শীতের শুরুতেই ৩১ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং আরও কম্বল বিতরণের কাজ চলছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

এনএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২৫  
কারিগরি সহযোগিতায়: জাগো হোষ্টার বিডি