বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) কৃষি প্রকৌশল বিভাগের একদল গবেষক পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী বায়োচার যন্ত্র উদ্ভাবনের দাবি করেছেন। এই যন্ত্রটি পাটকাঠিসহ বিভিন্ন ফসলের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করে কার্যকরভাবে বায়োচার তৈরি করতে সক্ষম। গবেষকদের মতে, এই প্রযুক্তি দেশের কৃষি খাতে টেকসই উৎপাদন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
গবেষক দলের প্রধান, বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম এই তথ্য জানান। এই গবেষণায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন বিনার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কৃষি প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. হোসেন আলী। বিনা’র গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের অধীনে এই গবেষণাটি তিন বছর ধরে পরিচালিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই গবেষণার একটি প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে জমা দেওয়া হয়েছে। উদ্ভাবিত যন্ত্রের কার্যকারিতা যাচাই করে একজন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ডিগ্রিও অর্জন করেছেন।
মো. আকতারুল ইসলাম ব্যাখ্যা করেন যে, অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পাটকাঠি, ধানের খড়, সরিষার গাছ ইত্যাদির মতো উদ্ভিদজাত উপকরণ থেকে বায়োচার তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াটি পাইরোলাইসিস নামে পরিচিত। তিনি আরও বলেন, খোলা জায়গায় জৈব পদার্থ পোড়ালে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য দূষণকারী গ্যাস নির্গত হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে এই যন্ত্রের মাধ্যমে সেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বায়োচার জমির জন্য অত্যন্ত উপকারী। সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি বায়োচারে কার্বনের পরিমাণ খুব কম থাকে, কিন্তু বিনা উদ্ভাবিত বায়োচার মেশিনের সাহায্যে সহজেই এবং কম খরচে উন্নত মানের বায়োচার উৎপাদন করা যায়।
তিনি আরও জানান, বিনা বায়োচার যন্ত্রটি প্রতিদিন প্রায় ১০০-১৫০ কেজি বায়োচার উৎপাদনে সক্ষম। এটি ৩০০০ ওয়াটের ইলেকট্রিক হিটিং কয়েল দ্বারা চালিত এবং ৯০০° সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারে। যন্ত্রটিতে দুটি স্তরের চেম্বার ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে গ্লাস-উল থাকার কারণে তাপের অপচয় রোধ হয়।
বায়োচারের উপকারিতা সম্পর্কে মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, মাটিতে বায়োচার প্রয়োগ করলে মাটির অম্লতা কমে, জৈব কার্বনের পরিমাণ বাড়ে, মাটি পানি ও পুষ্টি ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং উপকারী জীবাণুদের কার্যকারিতা বাড়ে। এর ফলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো সম্ভব হয়, যা পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যন্ত্রটি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি ব্যবহারের সময় শুকনো জৈববস্তু ব্যবহার করতে হয় এবং বিভিন্ন উপকরণের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা নির্ধারণ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধানের খড়ের জন্য ৩০০° সেলসিয়াস এবং পাটকাঠির জন্য ৪০০° সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়।
এছাড়াও তিনি জানান যে, বিনা’র উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটি বর্তমানে ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, কেওয়াটখালী, ময়মনসিংহ এবং এগ্রিটেক ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, পীরগঞ্জ, রংপুরে তৈরি ও সরবরাহ করা হচ্ছে।
Leave a Reply