গোপালগঞ্জে মহাজনি সুদ ব্যবসায়ীর চাপ সইতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে কমল বিশ্বাস (৫০) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২৯ জুলাই মঙ্গলবার ভোরে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃস্টি হওয়ায় গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর মোহাম্মাদ সাজেদুর রহমান ও বৌলতলী তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ মোঃ আফজাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
মৃত কমল বিশ্বাসের স্ত্রী রীনা বিশ্বাস জানিয়েছেন, আমার স্বামী এবং আমি ৩০০ টাকার ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর করে প্রতিবেশী বিধান ভক্তের স্ত্রী বীনা ভক্তের কাছ থেকে ২০২০ সালে মাসিক শতকরা তিন টাকা সুদে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নিই। এরই মধ্যে আমরা সুদ বাবদ এক লাখ বিশ হাজার টাকা পরিশোধ করি। এরপরও বীনা ভক্ত আমাদের কাছে সুদ-আসল মিলে সাড়ে চার লাখ টাকা দাবী করে। আমরা সাড়ে ৩লক্ষ টাকা দিতে রাজি হয়ে গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাতে বীনা ভক্তকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে স্ট্যাম্প ফেরত চাই। এসময় বীনা ভক্ত আমাদের কাছে আরো ১লক্ষ টাকা দাবী করে এবং বলে বাকী ১লক্ষ টাকা না দিলে স্টাম্প ফেরত দেয়া হবে না। ওই স্টাম্প দিয়ে আমার স্বামী ও আমার নামে মামলা করে টাকা আদায় করার হুমকী দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে।
তিনি আরো বলেন, বীনা ভক্তের খারাপ আচরন ও দেনা পরিশোধ করতে না পারায় আমার স্বামী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। সরারাত চিন্তায় হাহুতাশ করে। সকালে জমিতে যাওয়ার জন্য বের হলে পুকুরপাড়ে হঠাৎ স্ট্রোক করে পড়ে মারা যায়। বীনা ভক্তের সুদের টাকার চাপ সইতে না পেরে আমার স্বামী মারা গেছে। আমি বীণার শাস্তি দাবী করছি।
মৃত কোমল বিশ্বাসের ছেলে রাহুল বিশ্বাস, মেয়ে বৈশাখী বিশ্বাস তার বাবার মৃত্যুর জন্য মহাজনী সুদ ব্যবসায়ী বীনা ভক্তকে দায়ী করে তার কঠোর শাস্তি দাবী করছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বীনা ভক্ত বলেন, আমি কোমল বিশ্বাসের কাছে সুদ-আসল মিলে সাড়ে চার লাখ টাকা পাই। টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল, টাকা দেয় নাই, তাই আমি স্টাম্পও দেই নাই। কোমলকে আমি গালাগাল করি নাই বা কোন খারাপ আচরন করি নাই।
স্থানীয় সাড়পাড় ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কৌশিক কীর্ত্তণীয়া বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরে কোমল বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে মরদেহ ময়না তদন্তে পাঠাতে সহায়তা করি। আমি প্রশাসনের কাছে তদন্তপূর্বক কোমল বিশ্বাসের মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার দাবী করি যাতে আর কোন ব্যক্তি সুদ ব্যবসার জালে জড়িয়ে প্রাণ না দেয়।
এব্যাপারে গোপালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোহাম্মাদ সাজেদুর রহমান বলেন, মৃত কোমল বিশ্বাসের পরিবারের বর্ননা অনুযায়ী জানতে পারি তিনি প্রতিবেশী বীনা ভক্তের কাছে সুদের দেনা ছিলেন। টাকা দেওয়ার পরেও স্টাম্প ফেরত না পেয়ে মানসিক টেনশনে স্ট্রোক করে মারা গেছেন। আমরা মৃত্যুর সঠিক কারন জানতে গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) লাশ ময়না তদন্তে পাঠিয়েছি। ময়ন্তদন্ত শেষে মরদেহ লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
Leave a Reply