নিজস্ব প্রতিবেদক: শরিফ মন্ডল
রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট থেকে পীরগাছা হয়ে বালারহাট সড়কে অবস্থিত গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর উপর ৯৬ মিটার দীর্ঘ একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (LGED) বাস্তবায়নে নির্মিত এ ব্রিজ এখন এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
সেতুটি নির্মিত হয়েছে সড়কের ১৩৩৬৫ মিটার চেইনেজে, রোড আইডি ১৮৫৫৮২০০৬-এর আওতায়। প্যাকেজ নম্বর ছিল CIB-Ran-w-73। ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার ৯১৫ টাকা ১৩ পয়সা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন নীলফামারীর ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম, স্থানীয়ভাবে যিনি ‘ডাবলু শাহ’ নামে পরিচিত।
ব্রিজ নির্মাণের ফলে পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ এখন নিরবচ্ছিন্ন। আগে যেখানে বর্ষাকালে নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা, সেখানে এখন সোজা রাস্তায় মিনিট দশেকেই পার হচ্ছে ঘাঘট নদী। এ ব্রিজ হয়ে যানবাহন চলাচলের ফলে সময়, অর্থ এবং শ্রম—সবকিছুতেই সাশ্রয় হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরিফুল ইসলাম পেশায় মেকার বলেন, “আগে নদী পার হতে ৪০-৪৫ মিনিট সময় লাগতো। এখন মোটরসাইকেল বা গাড়ি নিয়ে ৫ মিনিটেই পার হয়ে যাই।”
সেতুর দুইপাশে গড়ে উঠছে নতুন দোকানপাট, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কলকারখানার জন্য জমি প্রস্তুত হচ্ছে, বাড়ছে বিনিয়োগের আগ্রহ। কৃষকেরাও সহজেই তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছেন।
এলাকাবাসী জানান, আগে পণ্য বিক্রির জন্য দূরে যেতে হতো, এখন ব্রিজ পার হয়ে কাছাকাছি বাজারে নেওয়া যাচ্ছে। কৃষিপণ্য বিক্রি হচ্ছে ভালো দামে।
ব্রিজের নান্দনিক কাঠামো এবং নদীঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই আসছেন শত শত মানুষ। শিশুদের নিয়ে পরিবারসহ অনেকেই বিকেল বেলায় নদীর পাড়ে সময় কাটাতে আসছেন। অনেকে বলছেন, এটি একটি ছোট পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে।
পীরগাছার এক শিক্ষার্থী জানায়, “বিকেলে আমরা বন্ধুরা মিলে এখানে আসি। নদী, ব্রিজ আর সূর্যাস্তের দৃশ্য খুব সুন্দর লাগে।”
এ প্রকল্পকে ঘিরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সর্বমহলে। জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন, এ ধরনের প্রকল্প জনজীবনের মানোন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। ভবিষ্যতে এই সড়ক ধরে আরও উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তারা।
Leave a Reply