সাব্বির হোসাইন ,তা’মীরুল মিল্লাত প্রতিনিধি
গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার তিতুমীর হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় মেজবাহ উদ্দিন নামের এক আলিম পরীক্ষার্থী তীব্র ছাত্রবিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে এনে মাদ্রাসা মাঠে বিক্ষিপ্তভাবে তার চুল কেটে দেন। পরবর্তীতে মাদ্রাসা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মেজবাহ উদ্দিন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে রক্তাক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি চাপা থাকলেও পোস্টের প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর, সন্ধ্যার দিকে তা শিক্ষার্থীদের নজরে আসে। এরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো তিতুমীর হলে।
পরে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে মাদ্রাসার মাঠে আনে এবং চুল কেটে দেয়। পরবর্তীতে মাদ্রাসা প্রশাসন ও ছাত্রসংসদের যৌথ উদ্যোগে তাকে হোস্টেল সুপারের কার্যালয়ে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়। পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অভিযুক্ত মেজবাহ উদ্দিন মাদ্রাসার তিতুমীর হলের ৬০০১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। অতীতে তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনের কর্মকাণ্ডে আবারও সক্রিয় হচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ফাজিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই মাস আমাদের জন্য বেদনার স্মৃতি বহন করে। শহীদ নাসির ইসলামসহ তিনজন সহপাঠীকে আমরা এই মাসেই হারিয়েছি। অথচ মেজবাহ সেই শহীদদের অপমান করে মন্তব্য করেছে। এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
তিতুমীর হল সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি দ্রুত পদক্ষেপ নিই, যাতে কোনো ধরনের মব ভায়োলেন্স না ঘটে। আমরা তাকে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে এনে মাঠে চুল কেটে প্রতিবাদ জানান।’
মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের জিএস সাইদুল ইসলাম বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি এবং নিরাপত্তা বিবেচনায় আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই। পরে তাকে টঙ্গী পশ্চিম থানায় হস্তান্তর করা হয়।”
অভিযুক্তের সহপাঠী আলিম পরীক্ষার্থী আবির বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পক্ষ নিয়ে মন্তব্য করে সে আমাদের শহীদ সহপাঠীদের অবমাননা করেছে। আমি ঘৃণা করি এমন একজনকে, যে শহীদ নাসির ইসলামের বিপক্ষে কথা বলে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি।’
তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিফজুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। তাদের অভিযোগ ছিল, সে রক্তাক্ত জুলাইয়ের শহীদদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আমরা তাকে পুলিশের কাছে তুলে দিই। এখন আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আইনগত প্রক্রিয়া শেষে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে আদালতে পাঠানো হবে।’
Leave a Reply