প্রতিনিধি :-সাব্বির হোসাইন
টঙ্গী, ৩০ জুন: গাজায় চলমান ভয়াবহ গণহত্যা এবং মুসলিম বিশ্বের আশ্চর্যজনক নীরবতা নিয়ে গতকাল রবিবার (২৯ জুন) গাজীপুরের টঙ্গীতে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। “গাজায় চলমান গণহত্যা: মুসলিম বিশ্বের নীরবতা” শীর্ষক এই গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারটি বিকেল ৩টায় শহীদ আব্দুল মালিক অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশ-বিদেশ থেকে আগত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন, যারা গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ হিফজুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তুরস্কভিত্তিক মানবাধিকার ও আইনি সংগঠনের সদস্য এবং ফিলিস্তিনি অধিকার রক্ষায় সক্রিয় কর্মী ড. আব্দুল আজিজ মাহমুদ আবু ইলিয়ান। তিনি আরবি ভাষায় তাঁর মর্মস্পর্শী বক্তব্য পেশ করেন, যা তা’মীরুল মিল্লাতের সহকারী অধ্যাপক ড. সালমান ফারসি সাবলীলভাবে অনুবাদ করেন।
ড. আব্দুল আজিজ মাহমুদ আবু ইলিয়ান তাঁর বক্তব্যে গাজার মর্মান্তিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, “গাজায় প্রতিদিন মানুষ মরছে। গতকাল একদিনেই ১৫টি পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হত্যা করা হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিল্পকারখানা সব ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে — যার একমাত্র উদ্দেশ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা।” তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ব বিবেকের প্রতি প্রশ্ন রাখেন, “এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ দেখে মুসলিম বিশ্ব নীরব কেন? মুসলিম নেতারা কোথায়? কেন বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হচ্ছে না?”
আলোচনায় আরও অংশ নেন তা’মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (TACSU) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল কবীর, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ড. মোজ্জাম হোসেন আল-আজহারি, সহ-প্রধান শিক্ষক শাইখ মিজানুর রহমান, তুরস্কের আল-রাওয়াদ একাডেমির পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আদনান আলহাজ্জ শাকের এবং তুরস্কের ডেইলি সাবাহ-এর সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
বক্তারা সম্মিলিতভাবে তাঁদের বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, “ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজা এক ভয়াবহ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। নারী-শিশুদের লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে চালানো এই নিধনযজ্ঞ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। অথচ মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব এ বিষয়ে আশ্চর্যজনকভাবে নিশ্চুপ এবং নিষ্ক্রিয়।”
তাঁরা আরও বলেন, “এই মুহূর্তে মুসলিম উম্মাহর উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো। গাজায় দ্রুত মানবিক সহায়তা পাঠাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনতে হবে, যাতে এই বর্বরতার বিচার নিশ্চিত হয়।”
সেমিনারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন, যারা গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংহতি জানান।
Leave a Reply