পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি –
রংপুরের পীরগাছায় হাজী ছফের উদ্দিন আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্র ও পাওটানা ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। চলতি দাখিল পরীক্ষায় পীরগাছার পাওটানা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে বদলি পরীক্ষার্থীর অংশ গ্রহন ও অবাধে নকল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। বদলি পরীক্ষার্থীদের আইনে সোপর্দ না করে শুধুমাত্র বহিষ্কার করে দায় এড়ান কর্তৃপক্ষ। বদলি পরীক্ষার্থীর অংশ গ্রহনে সহযোগিতাকারি ও নকল সরবরাহের জন্য চাঁদা উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পরীক্ষার কেন্দ্রে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে পেশাদার সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধাঁ।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) পাওটানা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা পর্যবেক্ষনের জন্য যাওয়ার পথে নিকটতম বাজারে পৌছামাত্র দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।
বিভিন্ন ফটোস্ট্যাট দোকান খোলা, শিক্ষকদের ভির। কেন্দ্রের গেটে ঝুলছে তালা, নেই কোন পুলিশ সদস্য/৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী। একাধিক বার সচিবকে ফোন দেওয়ার পরও তিনি রিসিভ করেননি। তখন কেন্দ্রের নিকটতম প্রতিবেশীরা বলেন, পরীক্ষা শুরুর পর মোবাইলে প্রশ্নপত্র বাহিরে নিয়ে উত্তর তৈরি করে কেন্দ্রের ভিতরে সরবরাহের পর গেটে তালা দেওয়া হয়, যদি কোন উর্ধতন কর্মকর্তা বা সাংবাদিক পরিদর্শনে আসেন তখন ভিতরে সকলকে সাবধান করে তালা খুলে দেওয়া হয়।
এদিকে কেন্দ্রের আশেপাশে ফটোস্ট্যাট মেশিনের দোকান খোলা থাকছে। সেগুলো থেকে প্রশ্নোত্তর ফটোকপি করে কেন্দ্র সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইংরেজি ১ম পত্র বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মোবাইলের মাধ্যমে কেন্দ্রের বাহিরে এনে নিজ নিজ মাদ্রাসার সুপারদের নির্দেশে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকরা প্রশ্নপত্রের সমাধান করে প্রতিটি হলে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেই সাথে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকদের কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
ফোনালাপে জানা যায়, পাওটানা বালিকা মাদ্রাসার অফিস সহকারী শাহ আলম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা চাঁদা উত্তোলন করেছেন। তবে তিনি চাঁদা উঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। কোরআন মাজিদ পরীক্ষায় ওই মাদ্রাসার দুই বদলি পরীক্ষার্থীকে আটক করা হলে তাঁরাও সুপার সিদ্দিকুর রহমান ও অফিস সহকারী শাহ আলম পরামর্শে ছোট বোনের পরিবর্তে বড় বোন পরীক্ষায় অংশ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্র সচিব আবু বকর সিদ্দিক।
পাওটানা ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক নুরুল ইসলাম কর্তৃক পরিচালিত ভার্সেটাইল কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও তাঁর ভাই কেডি নুরুল আলম দাখিল পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীকে পরীক্ষার কেন্দ্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার শর্তে রাত্রে দেখা করতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছেন। তবে ওই ছাত্রী ফেল করলেও রাত্রে দেখা করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। পাওটানা ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক নুরুল ইসলাম এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হলেও পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে পরীক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
গত ১০ এপ্রিল কোরআন মজিদ পরীক্ষার দিন পাওটানা ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা কেন্দ্রে পাওটানা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার মুন্নি আক্তার (রোল ৩৫৪৮৫৪) ও সুইটি আক্তার (রোল ৩৫৩৮৫৩) দুই পরীক্ষার্থীর বড় বোন বদলি হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদেরকে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে চিহ্নিত করলেও আইনের আওতায় না নিয়ে বহিষ্কার করে দেন। বহিষ্কার হওয়া ওই দুই পরীক্ষার্থী তাদের মাদ্রাসার সুপার সিদ্দিকুর রহমান ও অফিস সহকারী শাহ আলম এর পরামর্শে বদলি পরীক্ষা দেওয়ার স্বীকারোক্তি দিলেও তাঁরা ধরা ছোয়ার বাইরে।
বদলি পরীক্ষার বিষয়টি সচিব অকপটে স্বীকার করলেও সহকারী সচিব চর তাম্বুলপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার ওলি আহমেদ অস্বীকার করে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। কেন্দ্র সচিব আবু বকর সিদ্দিক ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ায় সহকারি সচিব চর তাম্বুলপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট ওলি আহমেদ সকল অনিয়ম ও নকল সরবরাহের মূলহোতা বলে ভুক্তভোগীরা বলেন। তবে তিনি আত্মস্বীকৃত বদলি পরীক্ষার্থীদের বিষয়টিকেও অস্বীকার করতে দ্বিধা করেননি।
বদলি পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে শুধুমাত্র বহিষ্কার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও সচেতন মহল।
কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ আবু বকর বলেন, ‘আঞ্চলিক মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে বদলি পরীক্ষার্থী শনাক্ত করে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
অভিভাবক আনছার আলী বলেন, বদলী পরীক্ষা দিতে এসে ধরা পড়েছে। তাকে আইনে সোপর্দ করা উচিৎ ছিল। এভাবে বহিষ্কার করে দায় এড়ানো ঠিক না। দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার আব্দুস সালাম বলেন, ‘দুই বদলি পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা সুপার ও অফিস সহকারী বদলি পরীক্ষা দিতে সহযোগিতা করার কথা স্বীকার করেছেন।
পাওটানা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দৈনিক সংবাদ, যুগান্তর, স্থানীয় তিস্তা সংবাদ এবং ৭১ টেলিভিশনের পীরগাছা প্রতিনিধিরা গেলে সচিব আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বোর্ড চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ সাংবাদিক পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ নিষেধ। অথচ কেন্দ্রে চলছে অবাধে নকল।
মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, সাংবাদিক সচিবের অনুমতি সাপেক্ষে কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন। সাংবাদিককে কেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধের বিষয়টি আমলে নিচ্ছি। লোক পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। অবশেষে একটি টিম পাওটানা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে একজন শিক্ষর্থীকে বহিষ্কার করেন।
Leave a Reply