ক্যাম্পাস২৪ প্রতিবেদক: ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে ৭৩ নম্বরের বেশি পেয়েও সরকারি মেডিকেলে সুযোগ পাননি অনেক শিক্ষার্থী। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৪০.৭ নম্বর পেয়েও চান্স পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৩৮০টি আসন। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ জন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষায় মোট ৬০ হাজার ৯৫ জন উত্তীর্ণ হন। পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৭৩ নম্বর পেয়েও চান্স পাননি, তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৪০.৭ নম্বর পেয়েও চান্স পেয়েছেন একজন। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৪১, ৪৬, ৫৬ এ রকম নাম্বার পেয়েও কেউ কেউ সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে সফল অভ্যুত্থানের পরও এ রকম বৈষম্য বিদ্যমান থাকায় শিক্ষার্থীসহ অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ডিএমসি) শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা চাই এই কোটার ফলাফল পরিবর্তন করা হোক। এবার এ রকম কোটা থাকলে সামনে আর কখনও পরিবর্তন হবে। এখন কী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছে? থাকলেও কতজন? এখন মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ধরলেও ৭০ বেশি। একে তো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার ছড়াছড়ি। আর আমরা চাই, এই পদ্ধতি বাতিল করা হোক।’
ডিএমসির আরেক শিক্ষার্থী আনিকা তাহসিন তাসু লিখেছেন, ‘কোটা না মেধা? মেধা, মেধা। এই স্লোগানটাই তো ছিল, তাই না? তাহলে মেডিকেল এডমিন টেস্টে এই বৈষম্য শুরু? সম্পূর্ণরূপে হতাশ।’
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. নাজমুল হোসাইন মেডিভয়েসকে বলেন, ‘৪০, ৪৬, ৫৬ পেয়েও কোটার কারণে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে, যেগুলো আদতে পাস নম্বরও না। কিন্তু ৭৩/৭৪.৫ পেয়েও চান্স হচ্ছে না। অথচ নম্বরের পার্থক্য কত বেশি, এগুলো কি অবিচার না? কোন বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুলাইতে এতগুলো মানুষের জীবন গেল?’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আপেল মাহমুদ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘৫৮ হাজারের বেশি সিরিয়ালে থেকে সরকারি মেডিকেলে চান্স পায় কীভাবে, যেখানে সরকারি মেডিকেলের সিট ৫ হাজার কিছু বেশি। চান্স পেতে অন্যদের যেখানে ৭৪ লাগছে। আর অন্যদিকে নাতি-নাতনীদের টেনেটুনে পাস নম্বর তুললেই চান্স, কিছু বলার ভাষা নেই।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাফল্যের বাংলাদেশে কোটা প্রথা চালু থাকায় খেদোক্তি করেন এক চিকিৎসক। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হায় রে কোটা! নিজের রেজাল্টের কষ্টটা দগদগে হয়ে উঠল …, কত রক্ত গেল তাও বৈষম্য তো দূর হলো না।’
আরেক চিকিৎসক লিখেছেন, ‘কোটা না মেধা? ২৪ এর আন্দোলন কেন হয়েছিল? কথা হলো, কোটা যদি বাদ হয়, তাহলে এটা কিভাবে বহাল থাকে? ৭০ বেশি পেয়ে চান্স না পাওয়া ভাই-বোনদের কি অবস্থা হবে, যখন এগুলো দেখবে? ছোটরা রাস্তায় নামতে চাইলে বলিস, আছি তোদের সাথে…, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তোদের ভাইকে পাবি পাশে।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমিন মেডিভয়েসকে বলেন, ‘কোটার বিষয়টি ভ্যারিফাই করা হবে। কোটার কাগজ-পত্র আনার জন্য প্রার্থীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৩ আর ২৪ জানুয়ারি। একদিন মুক্তিযোদ্ধা কোটা আর আরেকদিন প্রতিবন্ধী কোটা দেখা হবে। কাগজপত্র চেক করে কোটার রেজাল্ট চূড়ান্ত করা হবে।’
৪০ দশমিক ৭৫ পেয়ে একজন চান্স পেয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখনও প্রতিবন্ধী একটি কোটা খালি রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কোটা এখনও অনেকগুলো ফাঁকা আছে। কোটার জন্য তো সিট বরাদ্দ থাকে। যেহেতু কোটার সিট ফাঁকা রয়েছে, ৪০ এ চান্স পাওয়ার কথা। বড় কথা হলো, কোটাধারী কাউকে আমরা এখনও ভর্তি হতে দিচ্ছি না। কাগজপত্র ভ্যারিফাই করবো, তারিখও চূড়ান্ত। সব কিছু দেখে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
Leave a Reply