আশিকুল ইসলম,ববি:
দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যেনো পরিনত হয়েছে আওয়ামী দোসরদের আস্তানায়।
গত জুলাইয়ে দেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে দমানো এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে রক্ষা করতে ডাকা একটি অনলাইন মিটিং এর ভিডিও গতকাল (১৯ এপ্রিল ২০২৫খ্রীঃ) আমার দেশ পত্রিকার ফেসবুক পেজে পোস্ট করলে স্বৈরাচারের প্রশ্নে আবারও আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের এই ভিডিওতে দেখা যায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটা মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত মিটিংয়ে উপস্থিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের কথা বলেন।
গত ৫ই আগষ্ট ২০২৪খ্রীঃ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ কে স্বৈরাচার মুক্ত করার লক্ষ্যে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন কারী সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের পদত্যাগের দাবি ওঠে।তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ আগষ্ট ২০২৪খ্রীঃ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি বদরুজ্জামান ভূঁইয়া পদত্যাগ করেন।কিন্তু ভিসি পদত্যাগ করলেও আওয়ামী লীগের দোষরে পরিপূর্ণ দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের এই বিদ্যাপীঠ টি।
উপরে উল্লেখিত গতকালের সেই ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এবং তৎকালীন ভিসি বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে উক্ত মিটিং এ অংশগ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর আব্দুল কাইয়ুম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ আবির সহ আরও অনেকে।
উক্ত অনলাইন মিটিং এ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন চৌধুরী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানো আহ্বান জানান।তিনি বলেন,” শিক্ষার্থীদের ঘোষিত এক দফার কোনো যৌক্তিকতা নেই, আমি বিশ্বাস করি না। আমি এই আন্দোলনে যারা নেমেছে তাদের ঘৃণা করি,এই আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করি। আমরা সবাই আওয়ামী লীগে অর্থাৎ শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত তাই আমাদের শেখ হাসিনার পক্ষে দাড়ানো দায়িত্ব,সময় এসেছে প্রমাণ করার। ”
ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আরিফ হোসেন তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম কে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলে আখ্যা দেন,তিনি বলেন,”যারা শেখ হাসিনাকে হঠাতে এক দফা ঘোষণা দিয়েছে আমরা সেটা প্রতিহত করতে চাই।”
তৎকালীন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন শফিউল আলম ছাত্রদের পক্ষে কথা বলা শিক্ষকদের বক্তব্যকে উস্কানিমূলক বক্তব্য বলে মন্তব্য করেন।
এছাড়াও সকল শিক্ষক তাদের বক্তব্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য সবাই কে আহ্বান করেন।
উল্লেখিত স্বৈরাচারী হাসিনাকে রক্ষা করতে ষড়যন্ত্র মূলক সেই মিটিং এ উপস্থিত ভিসি বাদে বাকি সবাই এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বহাল রয়েছে।
উক্ত অনলাইন মিটিং এর ভিডিও প্রকাশ হবার পর শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রফিক তার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন,”স্বৈরাচার গেছে ঠিকই।কিন্তু এহন দেহি স্বৈরাচারের বাপ-মা,চৌদ্দ গুষ্টি এহনো রইয়া গেছে।
ববির ক্যাম্পাস!
স্বৈরাচারের ক্যাম্পাস।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিন খান বলেন,”এই ভিডিওটা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কতটা লজ্জার এটা অবর্ণনীয়। প্রথম স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গর্ব বর্তমান প্রশাসন এদের পুনর্বাসন করে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে।”
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক শিক্ষার্থী মাঈনুল ইসলাম বলেন, “জুম মিটিংয়ে হাসিনার পক্ষে সোচ্চার শিক্ষকদের একটা ভালো গুণ স্পষ্ট। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। তা হইলো: এরা “কৃতজ্ঞ”। ‘আওয়ামী লীগ’ কোটায় তাদের চাকরি হইছে, তারা দুর্দিনে আওয়ামী লীগের গণহত্যাকেও হালাল বানিয়েছে। তাদের মেরুদণ্ড না থাকলেও তাদের চেতনা আছে।”
এছাড়াও ববি উপাচার্য শুচিতা শারমিন বিরুদ্ধে আওয়ামী পন্থী শিক্ষক ও ছাত্রলীগকে পুর্নবাসন ও সহযোগিতার একাধিক অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে গত ২০ আগস্ট বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূইয়া। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাবি অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। উপাচার্য পদে যোগদানের পর থেকেই একের পর এক ইস্যুতে প্রশ্নের মুখে পড়েন শুচিতা শরমিন।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে বিরোধী দল”, এমন দাবি করে ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর ৩৫০ বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষক যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেখানে ড. শুচিতা শরমিনের নাম ছিল ১০৮ নম্বরে।
তিনি ববিতে যোগদানের পর থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতাকারী আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। এই শিক্ষকরা গত আগস্টে নানা অভিযোগে তৎকালীন উপাচার্য ড. বদরুজ্জামানের পাশাপাশি প্রক্টর, প্রভোস্টসহ প্রায় ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
শুচিতা শারমিন ববিতে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পতিত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের পক্ষের শক্তিকে নিয়োগ দিয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জনমতকে তোয়াক্কা না করে বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা তৈরি করেছেন বলে উপাচার্যের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
এর মধ্যে পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমানকে ভিসির একান্ত সচিব পদে নিয়োগ দেন তিনি। এই মিজানুর রহমান আওয়ামী লীগ আমলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে বিতর্কিত হয়েছিলেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে মেয়াদ শেষেও স্বপদে বহাল রেখেছেন তিনি।
ববিতে জুলাই বিপ্লবের সময় ছাত্র আন্দোলন দমাতে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন তৎকালীন প্রক্টর ড. আব্দুল কাইয়ুম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ আবির । উপাচার্যকে বর্তমানে পিছন থেকে তারাই চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বারবার আপত্তি জানালেও সেসব কথায় কর্ণপাত করেননি উপাচার্য। বরং তাদেরকে নিয়েই মিটিং করছেন। সিন্ডিকেটে তাদের বসিয়ে উপাচার্য তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার পায়তারা করছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
Leave a Reply