পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি-
রংপুরের পীরগাছায় ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়া পুড়ে চিটা হয়ে গেছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। এমএসবি ব্রিকস নামের একটি ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ৩০ জন কৃষকের প্রায় ১৭ একর জমির ধানের ক্ষেত ঝলছে গেছে। সদ্য বের হওয়া ধানের শীষগুলো ঝলসে চিটা হয়ে গেছে এবং অন্য জমির ধান গাছগুলো জ্বলে গিয়ে কালো হয়ে শুকিয়ে গেছে।
এতে করে ধানের জমির আইলে বসে বিলাপ করছেন কৃষক বাদশা মিয়া। কেউ বা বাকি ধানগুলো রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নের বামন সর্দার গ্রামের এমএসবি ব্রিকস নামের ইটভাটার উত্তর পাশের জমিগুলোতে ঝলসে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে করে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা। এছাড়াও ইটভাটার কারণে গত ৫ বছর ধরে ওই এলাকার গাছপালায় কোন ফল ধরছে না বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু কিছু ধানের ক্ষেত সোনালী রং ধারন করেছে। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন পাকা ধানের ক্ষেত। অথচ কাছে গেলেই দেখা যায়, সব ঝলছে চিটায় পরিনত হয়েছে। যে জমিগুলোর ধান এখনো বের হয়নি সেগুলোও পুড়ে বিবর্ন রুপ ধারন করেছে।
ধানের ক্ষেতের মাঝখানে এসময় কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছেন কৃষক বাদশা মিয়া (৫৫)।তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে ঘরের ধানের ভাত খেতে পারেন না। ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় সব শেষ হয়ে গেছে। ধানের শীষ বের হলেই ইটভাটা মালিক ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে তাদের ক্ষতি করছে। এত যত্নে করা ফসল নষ্ট হওয়ায় তারা এখন দিশেহারা। এ বছর কি খাবেন, কিভাবে চলবেন সেই চিন্তায় গোটা পরিবার। এসময় একে একে আসতে থাকেন ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা। কৃষক মদন, সুরেশ চন্দ্র, দ্বীননাথ, নিখিল চন্দ্র, ইউসুফ আলী, রওশন, সিদ্ধার্থ, রঞ্জিত, সুশান্ত, আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। প্রতিবছর ধান পুড়ে যাবে, আর তারা ক্ষতিপূরনের আশ্বাস দিয়ে পার পেয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ইটভাটা ম্যানেজার মোনা চন্দ্র বর্মন বলেন, ভাটা মালিককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি এটা সমাধনের চেষ্টা করছেন।
ভাটা মালিক মমিনুল ইসলাম বলেন, আমার ভাটার কারণে ক্ষতি হয়ে থাকলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে ওই ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আহসানুল হক বলেন, একেবারে পুড়ে যাওয়া জমিগুলো ধান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেগুলো কম পুড়েছে সেগুলোতেও চিটা ধান বের হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আপাতত ইটভাটার কারণে জমিগুলোর এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তারপরও আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অফিস প্রধান) কমল কুমার বর্মন বলেন, তারা অভিযোগ পেলে সরেজমিনে তদন্ত করে ওই ভাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক সুমন বলেন, আইন অনুযায়ী ইটভাটা বন্ধ থাকার কথা। কিভাবে চালু আছে তা খতিয়ে দেখা হবে। কৃষকদের ক্ষতির বিষয়ে আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার সুযোগ আছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply