নিজস্ব প্রতিবেদক
রংপুর সদরের উত্তম জাফরগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আমিরুজ্জামান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রজনতার উপর হামলার মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি গ্রেফতার হওয়ার ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও জেলে থেকেও এখনো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গ্রেফতার হওয়ায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়,রংপুর সদরের উত্তম জাফরগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসায় গত ২০২৩ সালের ১ অক্টোবরে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত বেসরকারি মাদরাসা সমূহের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের চাকুরির শর্তাবলি সংক্রান্ত প্রবিধান-২০২৩ (সংশোধিত) লংঘন করে জ্যৈষ্ঠ সরকারি অধ্যাপকের পরিবর্তে সহকারি অধ্যাপক মোঃ আমিরুজ্জামানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েই গঙ্গাচড়ার পলাতক এমপি আসাদুজ্জামান বাবলুর পিএস আব্দুল মতিনকে এডহক কমিটির সভাপতি বানিয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়মের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। বেশিরভাগ সময়ে প্রতিষ্ঠানে খেয়ালখুশিমত যাতায়াত করতেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের দলীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে মাদ্রাসার আরবি বিভাগের জ্যৈষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক মুনসুর আলীকে বরখাস্ত করেন।একই সঙ্গে অশালীন আচরণ, শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও চাকরি বিধি বহির্ভূত কার্যক্রমের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের তদন্তে প্রমাণিত হয়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আইয়ুব হোসেন স্বাক্ষরিত আদেশে চাকরি বিধি লংঘনের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিলেও জেলা শিক্ষা অফিসার এনায়েত হোসেনের মামা হওয়ার সুবাদে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সভাপতি রংপুর জেলা প্রশাসক।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের মাঠে মাটি ভরাট বাবদ রংপুর-১ আসনের সাবেক এমপি মোঃ আসাদুজ্জামান বাবলুর বরাদ্দকৃত দুই লাখ টাকা নিজ একাউন্টে নিয়ে আত্মসাৎ করেন। মাদ্রাসার মাঠে মাটি ভরাটের নামে আশি হাজার টাকার ভুয়া ভাউসার বানিয়ে প্রতিষ্ঠানের মাদ্রাসার একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
এদিকে রংপুর ১ আসনের সাবেক এমপি মোঃ আসাদুজ্জামান বাবলুর পিএস আব্দুল মতিন তার প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হওয়ার সুবাদে আওয়ামীলীগের পরিচয়ে এলাকায় ত্রাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অধ্যক্ষ। এমপির সঙ্গে ফটোসেশন আর দলীয় কর্মকাণ্ডেই অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আমিরুজ্জামান।
এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর অভিভাবক শাহিনুর ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ থেকে প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নাই। জেলে থাকার পরেও আমিরুজ্জামান স্বপদে বহাল। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার কার্যকক্রম ঠিকভাবে হচ্ছে নাহ। আমার সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে আমি চিন্তিত। অতিদ্রুত ফ্যাসিবাদের দেসর অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামানকে বরখাস্ত করে প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হোক। জেলা শিক্ষা অফিসার এনায়েত তার মামা জন্যই তার বিরুদ্ধে ডিসি এক সপ্তাহ গেলেও ব্যবস্থা নিতেছে নাহ।
রংপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এনায়েত হোসেন জানান, আমি গতকালকে বিষয়টি জেনেছি। আমাদের এডহক কমিটির সভাপতি ডিসি। এবিষয়ে ডিসি স্যার ব্যবস্থা নিবে। আত্মীয়তার সম্পর্কের মামা হওয়ার কারণেই অনিয়মের পরেও এতদিন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ওনি আমার আগে থেকেই পরিচিত।আত্মীয় নয়।কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিষয়ে কথা বলতে রংপুর জেলা প্রশাসক মোঃ রবিউল ফয়সালের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৭ জানুয়ারি রংপুর মহানগরীর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং গেটে আন্দোলনকারীদের উপর গত ১৬ জুলাই হামলার ঘটনায় আহত মোঃ পাপুল (২৪) এর তাজহাট থানায় দায়েরকৃত মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ মোঃ আমিরুজ্জামান। গ্রেফতারের পর নিয়ম অনুযায়ী সাসপেন্ড হওয়ার কথা থাকলেও কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি আর জেলা শিক্ষা অফিসারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জেলে থেকেও বহাল তবিয়তে অধ্যক্ষ।
Leave a Reply