নিশান খান
জাবি প্রতিনিধি

কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত ও কৃষি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহিদ মিনার চত্বরে অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটি বিভাগের ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সুকান্ত বর্মন।

প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত একা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তিনি। সুকান্তের এই কর্মসূচিতে ধীরে ধীরে সংহতি প্রকাশ করছেন অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও। সরেজমিনে দেখা যায়, তার প্রতিবাদে একাত্মতা প্রকাশ করে অনেক শিক্ষার্থী তার সঙ্গে অবস্থান করছেন।

সুকান্ত বর্মন বলেন, “এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা, অথচ ১ মণ কুমড়ার দাম মাত্র ২৫০ টাকা! এই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দেশের কৃষকেরা। তাদের কষ্টার্জিত পণ্যের সঠিক মূল্য না পেয়ে তারা সন্তানদের মৌলিক চাহিদাও মেটাতে পারছেন না।”

তার দাবি অনুযায়ী, “বাংলাদেশে সব পণ্য উৎপাদনমূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হলেও, কৃষিজ পণ্য সে সুযোগ পায় না। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের প্রায় ৯৫% মানুষের জীবন কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এই অন্যায় বছরের পর বছর চলতে পারে না।”

সুকান্ত বর্মন চার দফা দাবি উত্থাপন করেছেন: কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যূনতম মূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং ৫-১০ টাকা কেজি দরে পণ্য কেনা বন্ধ করতে হবে; প্রতি উপজেলায় কৃষকদের সম্মানে ইভেন্ট আয়োজন ও কৃষিখাতে নারীদের শ্রমের স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে; দ্রুত পচনশীল কৃষিপণ্যের জন্য সংরক্ষণাগার ও ট্রেন পরিবহণ ব্যবস্থা সরকারিভাবে উন্নয়ন করতে হবে; জিডিপির ৫% কৃষিখাতে ভর্তুকি দিতে হবে এবং তা সম্পূর্ণ অটোমেশন প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে হবে। সেইসাথে উত্তরবঙ্গে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করতে হবে।

সুকান্তের এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, “উত্তরবঙ্গসহ সারাদেশের কৃষকরা দালাল চক্রের শিকার হয়ে উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। সুকান্তের এই প্রতিবাদে আমি একাত্মতা প্রকাশ করেছি। কৃষকরা আমাদের দেশের সম্পদ—তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”

সুকান্ত আরো জানান, “রাষ্ট্র ও জনগণের কাছে কৃষকের দুর্দশা তুলে ধরাই আমার মূল উদ্দেশ্য। রাষ্ট্র কোনো প্রতিক্রিয়া না দেওয়া পর্যন্ত আমি ক্লাস চলাকালে ৩০ মিনিট এবং ছুটির দিনে ১ ঘণ্টা এই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”

তিনি দেশের কৃষকদের সন্তানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা এই ন্যায্য দাবির পক্ষে দাঁড়ান। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তার অবস্থান চলবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে।