মোঃআশিকুল ইসলাম
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়(ববি)এর ভিসি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ৪ ই জুন সকল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি নিয়োগের সার্চ কমিটির সভাপতির স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
উক্ত বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশের পর পরই প্রশ্ন আসে, “কেমন ভিসি চান শিক্ষার্থীরা?”এর কারন বিগত ৫ ভিসির কেউ ই শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত আশা পূরণ করতে পারে নি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মতামত,যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী অর্থাৎ ষষ্ঠ তম ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাবেন, তিনি যেনো শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ দিনের দাবি গুলো পূরণ করেন।
এ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়টির দর্শন বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃইফতেখার রহমান বলেন,
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈচিত্র্যময় পরিবেশে দৃঢ়তার সাথে টিকে থেকে নিজের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও সকলের প্রকৃষ্ট মতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারবে এমন ভিসিই চাই। আসলে বর্তমানে দেশের মানুষ প্রগতি চায়,তারা চায় এদেশ শিক্ষা,গবেষণা ও উদ্ভাবনে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলুক। আমরা চাই আমাদের আগামীর ভিসির হাত ধরে বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং এ ববি উপরে উঠে আসবে; ক্যাম্পাসে থাকবে ন্যায়,মানবিকতা,আনন্দ ও সাফল্য।আমরা চাই বিগত ভিসি মহোদয়কে যেসব দাবি দেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২৪ জানুয়ারী ২০১২ তারিখে চারটি অনুষদের অধীনে ছয়টি বিভাগ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত অনেক ভিসি আসলো এবং চলে গেল। কিন্তু দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো এবং শিক্ষার মানের তেমন উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। যখন নতুন কোন ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ হতো তখন তারা আমাদের আশ্বাস দিতেন যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন করবেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা তেমন কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন পাইনি। তারা নিয়োগ হওয়ার কিছুদিন পর তাদের সেই প্রদান করা আশ্বাস ভুলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন চিন্তা বাদ দিয়ে তারা নিজেদের উন্নয়ন চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে। যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ওনারা বুঝতে সক্ষম হন না। সম্ভব হয়ে ওঠে না বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন। এই অবস্থায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এমন একজন ভিসি আমরা প্রত্যাশা করি, যিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বুঝতে সক্ষম হবেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যা সমাধান করবেন। পূরণ করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সকল প্রত্যাশা। সব সময় যার চিন্তায় থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন। যার হাত ধরে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে। যিনি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান। এইবার আমরা এমন একজন ভিসি পাওয়ার প্রত্যাশা রাখছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।
একই বিভাগের আর এক শিক্ষার্থী রবিউল খান বলেন,”আমরা এমন ভিসি চাই যে সেশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। সেমিস্টার যথাসময়ে শেষ, ফলাফল দ্রুত প্রকাশ এবং নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করবে এবং পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সক্রিয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করাও সময়ের দাবি।আমরা চাই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য ভিসির সৎ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবে । শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যা আবাসন, খাবার, নিরাপত্তা,সমাধানে নীতিনির্ধারক ও অভিভাবকের মতো ভূমিকা রাখতে হবে।শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ এই তিনটি দিককে অগ্রাধিকার দিতে হবে এমন ভিসি আমাদের চাওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়টির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহীন বলেন,“আমরা এমন একজন ভিসি চাই যিনি তার দায়িত্বের প্রতি হবেন যত্নবান। জবাবদিহিতার অনুভূতি নিয়ে তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন । শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়া গুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিবেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক বিভাগে লাল ফিতার দৌরাত্ম নির্মূল করবেন। তিনি যে কোন দলের হতে পারবেন কিন্তু কোনরূপ দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করতে পারবেন না । এছাড়াও ৫ই আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে শোষণ হীন মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তিনি তার যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যেন স্বৈরাচারী হয়ে না উঠতে পারেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী ও সহচরদের যারা প্রত্যক্ষভাবে অন্যায়ের সাথে জড়িত তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারণ করা । এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে যা যা প্রয়োজন তিনি তা করবেন। সবশেষে বলতে চাই তিনি জুলাই আগস্ট স্পিরিট কে ধারণ করে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
উল্লেখ্য,গত ১৩ই মে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অপসারণ করা হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম ভিসি অধ্যাপক ড.সুচিতা শরমিন কে।তাকে অপসারণের পর বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্তবর্তিকালীন ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম কে।
Leave a Reply