
ইবি প্রতিনিধি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচার ও নারী শিক্ষার্থীকে পোশাক নিয়ে কটূক্তিকারী অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝির বহিষ্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই কর্মসূচির পর দুপুর দেড়টার দিকে উপাচার্যের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার পর ১০৪ দিন পার হলেও এখনো কোনো তদন্তের অগ্রগতি নেই, খুনিদের গ্রেফতারও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও বিচার প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তারা অভিযোগ করেন, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝি নিহত সাজিদকে “কোথাকার কোন মৃত পোলা, যাই হোক সে তো চইলাই গেছে” বলে অবমাননাকর মন্তব্য করেন এবং নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। শিক্ষার্থীদের মতে, এমন বক্তব্য নৈতিক অধঃপতন ও বিচারবোধহীনতার প্রকাশ।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি সমূহ:
১. সাজিদ হত্যার পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করে খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করা।
২. নিহত সাজিদকে হেয় প্রতিপন্ন করা ও নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কটূক্তিকারী অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝিকে বহিষ্কার করা।
৩. সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি প্রদানকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৪. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা প্রদানকারীদের উদ্দেশ্য যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
৫. শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ ও আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত রাখা এবং কোনো আন্দোলনকারীর একাডেমিক ফলাফলের ওপর বিরূপ প্রভাব না পড়া নিশ্চিত করা।
স্মারকলিপি গ্রহণ শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “কোনো শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীকে অপমান করে, তাহলে আমি সেই ঘটনার জন্য দুঃখিত। কথা বলার অধিকার আছে, কিন্তু কাউকে গালি দেওয়ার অধিকার নেই। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সে ব্যবস্থা নেব। তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
অন্যদিকে অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, “সাজিদের হত্যার বিচার চেয়ে আমি নিজেই বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। তবে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলার সময় শব্দচয়নে ভুল হয়েছে, যা আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) মধ্যরাতে অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মিঝির একটি পুরনো অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাতে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে ‘উলঙ্গ নারী’ বলে উল্লেখ করতে শোনা যায়। অডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সবার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
Leave a Reply