নুসরাত নাঈম সাজিয়া, রাজশাহী কলেজ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শনিবার (৩১ মে) সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দেশের ১৩৭টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজে পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয় অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে।
পরীক্ষা আয়োজনে কলেজ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের তৎপরতা ছিল নজরকাড়া। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ, কক্ষ বণ্টন, প্রশ্নপত্র বিতরণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবকিছুই ছিল সুপরিকল্পিত ও সময়ানুগ।
পরীক্ষা শেষে মুখে প্রশংসা নিয়ে ফিরলেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশা করছেন, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং সময়মতো প্রকাশিত ।রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রে এবার অংশ নিয়েছেন মানবিক শাখার ১৫,৮৫৭ জন পরীক্ষার্থী। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের মতে, এমন সুশৃঙ্খল পরীক্ষা তারা আগে দেখেননি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা পরীক্ষার্থী মাহমুদা পারভীন বলেন, স্টেশন থেকে কলেজ পর্যন্ত ছাত্রসংগঠনগুলোর বাইক সার্ভিস সত্যিই অনেক উপকারে এসেছে। তারা পথনির্দেশনা দিচ্ছিল এবং সহযোগিতামূলক আচরণ করছিল।
বগুড়া থেকে আসা পরীক্ষার্থী তানভীর হাসান জানালেন, কলেজে প্রবেশের পর স্টলে গিয়ে আমরা পরীক্ষার হলে যাবার দিকনির্দেশনা পেয়েছি। পানি ও কলমের ব্যবস্থা ছিল। এতে মানসিক চাপ কমে গেছে।পাবনার শিক্ষার্থী সাবরিনা হক বলেন, ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ও অন্যান্য সংগঠনের স্টলে গিয়ে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি। মনে হয়েছে যেন পরিবারের কেউ পাশে আছে।
আরেক পরীক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ বলেন, পরীক্ষা খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো বিশৃঙ্খলা ছিল না। প্রশ্নপত্র ছিল মোটামুটি সহজ। আশা করছি রাজশাহী কলেজেই ভর্তি হতে পারবো।
পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে আসে রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। এর মধ্যে ছিল রাজশাহী কলেজ ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ও ছাত্রদল।
তারা কলেজ চত্বরে একাধিক সেবামূলক স্টল স্থাপন করে। পরীক্ষার্থীদের জন্য ছিল ফ্রি পানি, কলম, আসন খোঁজার সহায়তা, বাইক সার্ভিস ও তথ্যকেন্দ্র।
এই উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে অভিভাবকদের কাছেও। নাটোর থেকে আসা অভিভাবক মো. আজিজুল হক বলেন, ছাত্রসংগঠনগুলোর টেন্টে বসার ব্যবস্থা ছিল, তাতে আমরা অভিভাবকরা পরীক্ষার সময়টা স্বস্তিতে কাটাতে পেরেছি। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা শাহনাজ বেগম জানান,
আমি মেয়ে নিয়ে এসেছি। ওদের একজন সদস্য আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এমন সহযোগিতা আর কোথাও পাইনি।
রাজশাহীর বাইরের অভিভাবক আব্দুল কাদের বলেন,
ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ছেলেরা শৃঙ্খলভাবে কাজ করছিল। তারা আমাদের পানি দিয়েছে, বসার জায়গা দেখিয়েছে। এটা শিক্ষাঙ্গনের ইতিবাচক দিক রাজনীতি নয়, শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা।
রাজশাহী কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুম বলেন, আমরা পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোকে কর্তব্য মনে করি। তাদের যেকোনো সহযোগিতায় আমরা প্রস্তুত ছিলাম। এটা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ।
রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির জানান, এই ধরনের সময়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি নয়, মানবিক সেবার জায়গা থেকে কাজ করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা চেষ্টা করেছি, পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যেন কোনো ভোগান্তি না হয়।
Leave a Reply