ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) ও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) ৮০ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ছয় হাজার ২৫৭ শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের নিবন্ধন জটিলতার অবসান হয়েছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গত ২৬ নভেম্বর অনুষদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রমা ম্যাটস, শ্যামলী ম্যাটস ও ট্রমা আইএমটির ভর্তি জালিয়াতি-সংক্রান্ত একটি রিটের কারণে গত পাঁচ মাস ধরে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত ছিল। গত ২৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রিটটি খারিজ করে দিলে নিবন্ধনের আইনি বাধা কেটে যায়।
অনুষদের কর্মকর্তারা জানান, ভর্তি পরীক্ষার বাইরে অবৈধভাবে ভর্তি হওয়া কয়েক শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশনের দাবিতে গত মার্চে আদালতে রিট করেছিলেন। আদালত সেই রিট খারিজ করায় তাদের ভর্তি অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট ৮০ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থী ক্ষতিপূরণ চাইলে আদালত দিতে বাধ্য থাকবেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে এ ধরনের জালিয়াতি শুধু শিক্ষা ব্যবস্থার মান নষ্ট করছে না, বরং ভবিষ্যতের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এতে সাধারণ মানুষের নিরাপদ চিকিৎসাসেবা হুমকির মধ্যে পড়বে। তিনি দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
গত বছর ২ ডিসেম্বর ‘দেননি ভর্তি পরীক্ষা, হয়ে যাচ্ছেন মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পর ১০ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ। গত ১২ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ট্রমা ম্যাটস, শ্যামলী ম্যাটস ও ট্রমা আইএমটিতে অন্তত ১৯৩ শিক্ষার্থী ভুয়া পরিচয়ে ভর্তি হন। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর ও প্রাপ্ত নম্বর জাল করে ভিন্ন ব্যক্তিকে ভর্তি দেখানো হয়। একটি ঘটনায় দেখা যায়, রেডিওলজি বিভাগে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী অভিজিৎ কর্মকারের (রোল নম্বর ৮৪০০৫৮) পরিবর্তে অভিজিৎ দাস নামের অন্য একজনকে ভর্তি করানো হয়।
একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে ম্যাটস-আইএইচটিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে থেকেই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা চালু ছিল। ফলে পুরোনো নীতিমালার অজুহাত দেখিয়ে ভর্তি বৈধতার দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনটি প্রতিষ্ঠান এবং ১৯৩ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই জালিয়াতির সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের সাময়িক বরখাস্তকৃত সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. ইমরুল কায়েস, তার স্ত্রী তানজিনা খান এবং অনুষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরুল কায়েস বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে। আমার বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোনো প্রজ্ঞাপন হয়, তাহলে আপিল করব। যে রায় আসুক, মাথা পেতে নেব।
রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কেবল জাতীয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই নিবন্ধনের যোগ্য। আদালতের সিদ্ধান্তের পর নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিয়মবহির্ভূত ভর্তির বৈধতা নেই। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
Leave a Reply