মোঃআশিকুল ইসলাম
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমন করতে মামলার আশ্রয় নিচ্ছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন — এমন অভিযোগ উঠেছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, গতকালকে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কার্যালয় তালাবদ্ধ করার পর উপাচার্য নিজে বন্দর থানার ওসিকে ফোন করে ১০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সানোয়ার পারভেজ লিটন বাদী হয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও ভিসি বিরোধী আন্দোলন হওয়ায় ভিত্তিহীন অভিযোগে শিক্ষার্থীদের নামে মামলা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ববি উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে।
বন্ধর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন , “ আমাদের কাছে আপাতত ১০ জন শিক্ষার্থীর নামে সাধারণ ডায়েরি ( জিডি) করা হয়েছে”
জিডিতে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন:
১. রাকিন খান ( ইংরেজি বিভাগ)
২. নাজমুল ঢালী ( গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ)
৩. মোকাব্বেল শেখ ( লোকপ্রশাসন বিভাগ)
৪. তরিক হোসেন ( আইন বিভাগ)
৫. মিজানুর রহমান ( ইংরেজি বিভাগ)
৬. এনামুল হক ( ইংরেজি বিভাগ)
৭. এমডি শিহাব ( রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ)
৮. তরিকুল ইসলাম ( ইংরেজি বিভাগ)
৯. স্বপ্নীল অপূর্ব রকি ( কোষ্টাল স্টাডিজ বিভাগ)
১০. রফিক ( রসায়ন বিভাগ)
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের কণ্ঠরোধ করতে জিডি এবং মামলার ভয় দেখাচ্ছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাকিন খান বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদি আমলেও এমন যৌক্তিক আন্দোলনে হামলা মামলা দিয়ে আন্দোলন দমন করা হতো। এখনো আমরা দেখছি আমাদের উপাচার্য আন্দোলন দমন করতে ফ্যাসিবাদের ন্যায় মামালা দিয়ে যৌক্তিক আন্দোলন দমন করতে চাচ্ছে। এসব করে উপাচার্য ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের পথ সুগম করতে চায়। যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে করতে দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, এসব মিথ্যা মামলা জিডি করে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন থামানো যাবে না।”
এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ বলেন, “ভিসি একদিকে বেআইনি ক্ষমতাবলে স্বৈরাচারের দোসরদের রক্ষা করছেন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন দমনে একের পর এক মামলা দিয়ে সকল যৌক্তিক আন্দোলন দমনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রশাসনের এ ধরনের ফ্যাসিস্ট আচরণ নিন্দনীয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ১০ জনের অধিক শিক্ষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির পেছনে উপাচার্যের একক সিদ্ধান্ত ও অদূরদর্শিতাই দায়ী। প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক আচরণে শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।”
এ বিষয়ে সিকিউরিটি অফিসার সানোয়ার পারভেজ লিটন বলেন ” বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী, রেজিস্ট্রারের রুমে তালাবদ্ধ করে এ কারণে কতৃপক্ষের নির্দেশক্রমে আমার পক্ষ থেকে জিডি করা হয়েছে, আসলে আমার পক্ষ থেকে বলতে উপর থেকে যে নির্দেশ দেওয়া হয় সেটাই আসলে আমার করতে হয়,অতীতের মামলাগুলোও তাদের নির্দেশক্রমেই করতে হয়েছে। ”
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সোনিয়া খান সনিকে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া মেলেনি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলেনি।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে।
Leave a Reply