
নুসরাত নাঈম সাজিয়া, রাজশাহী কলেজ:
রাজশাহীর এবছরের বইমেলার চিত্র যেন কিছুটা আলাদা। দুপুর গড়িয়ে বেলা হতেই মেলার মাঠ স্নিগ্ধ রোদের সাথে ভরে ওঠে বইপ্রেমীদের পদচারনায়। বইপ্রেমী এই দর্শনার্থীরা কেউবা স্কুল থেকে এসেছে,কেউবা কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে। কেউ এসেছে প্রিয় বন্ধু, শিক্ষক বা অভিভাবকের সাথে, হাতে স্কুলব্যাগ, গায়ে ইউনিফর্ম, কারো হাতে বন্ধুদের উপহারের বেলুন। মেলায় কেউ কেউ পরিবারের সাথে এসে কিনছে বই। একসঙ্গে স্টলে ঘুরে দেখছে বই, কেউ কেউ গল্প-ছবিতে মেলার প্রাঙ্গনকে করছে প্রাণোচ্ছ্বল।
তবে এবারের মেলার বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে রাজশাহী কলেজের একদল উদ্যোমী তরুণ প্রাণ। রাজশাহী কলেজ পড়ুয়া বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা ধরা দিয়েছেন বই বিক্রেতার রুপে। বই কিনতে আসা বন্ধু, শিক্ষক, আত্মীয় বা পরিচিত থেকে শুরু করে সকল ধরনের ক্রেতাদের সাথে হাসিমুখে করছে বই বিক্রির দর। প্রতিবার মেলায় বই কিনতে বা দেখতে আসা একঝাঁক তরুণ -তরুণী এবারের মেলায় উদ্যোগ নিয়েছে ভিন্নরকম। স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রকাশনীর বইয়ের স্টলে বিক্রেতা হিসেবে থাকছেন তারা।
সত্যায়ন পাবলিকেশন এর স্টলে থাকা রাজশাহী কলেজের আরবি বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, কলেজ শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও এই উদ্যোগ দেখে প্রশংসা পাচ্ছি। অনেকেই অনুপ্রাণিত করতে বই কিনছে আমাদের দেখে। অনেকেই বই না কিনলেও আমাদের সাথে ক্রেতা বা দর্শনার্থীদের যে কথোপোকথন তা থেকে একটা ভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতা লাভ করছি।অলস বিকেলটা এক সুন্দর কাজের সাথে থেকে কাটাতে পারছি, বাস্তব জ্ঞান লাভ করছি।
৩২ নম্বর স্টলের বিক্রেতা ও রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের বলেন,
বিভাগীয় বই মেলায় আমি স্টল দিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। বই বিক্রির সাড়া মোটের ওপর ভালোই আছে।তবে গত দু’দিনের টানা বৃষ্টির কারণে বিক্রিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছিল।কিন্তু আজকে আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি বলেন, অনেকেই শুধু বই দেখতে আসে, ছবি তোলে, তারপর চলে যায়।কিন্তু বই কেনার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম। দর্শনার্থীদের সবাই যদি একটি করেও বই কিনে নেয় তাহলে সব বই শেষ হয়ে যাবে।
তিনি তার এই উদ্যোগের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানান, এই মেলায় স্টল নেওয়ার মাধ্যমে এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই বই নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল, সেই আগ্রহ থেকেই এবার হাতে কলমে শুরুটা হলো। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে অনলাইনভিত্তিক পার্ট-টাইমভাবে বই নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।
এ ব্যপারে বইমেলায় ঘুরতে আসা ক্রেতা রাজশাহী কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সোনিয়া বলেন, অপরিচিত বিক্রেতাদের সাথে কথা বলতে,দরদাম করতে বা বই ব্যপারে জানতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ছিলাম। মনে হচ্ছিল চেনা কেউ যদি দোকান দিত তাহলে ভালো হতো! এবার সেই আক্ষেপ কাজ করছেনা, আমার বন্ধুর স্টলে বইয়ের কালেকশন আর তার এই সুন্দর উদ্যোগ দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।
উক্ত বইমেলার আয়োজক, প্রকাশক ও লেখকদের মতে,পাঠকশ্রেণির বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। নতুন পাঠকদের মধ্যে তরুণরা অর্থাৎ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন অনেক,ঠিক তেমনই বিক্রেতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগও প্রশংসনীয়। সাহিত্য, সমকালীন গল্প ও থ্রিলার ধরনের বই বিক্রির সাথে থেকে তারা পাঠক ও বিক্রেতা উভয় ধরণের অভিজ্ঞতা একসাথে লাভ করছে। আমরাও তাদের এ ব্যপারে অনুপ্রাণিত করছি।
সূর্যাস্তের সাথে সাথে বইমেলার স্টলগুলো হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। এই অদম্য মনেভাবের শিক্ষার্থীদের হাসিমুখে ক্রেতাদের সাথে কথা বলতে দেখা যায় বিভিন্ন বই সম্পর্কে। তাদের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা জানান দিচ্ছে যেন এরাই সময়ের সাথে নতুন প্রকাশক বা লেখনীর সম্ভাবনার পথিক। ছোট ছোট উদ্যোগ থেকে নিজেদের অর্জিত এমন বাস্তব জ্ঞান দিয়েই একদিন তারা বিশ্বজয়ের স্বপ্নকে হয়তো বাস্তবায়ন করে তুলবে।
Leave a Reply