তা'মীরুল মিল্লাত প্রতিনিধি
গাজীপুর, ৪ জুলাই ২০২৪: গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় ‘জুলাই বিপ্লব’ বিরোধী মন্তব্য এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম রাতুল হোসাইন। সে মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। গতকাল বুধবার (৩ জুলাই) এ ঘটনার পর থেকে পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রাতুল গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে। অভিযোগ উঠেছে, রাতুল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘জুলাই বিপ্লব’ বিরোধী এবং বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য করেছে। এছাড়াও, একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে সে অশালীন ও উস্কানিমূলক বক্তব্য ছড়ানোর পরিকল্পনা করছিল বলেও জানা গেছে। একইসঙ্গে, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে মেসেঞ্জারে তার যোগাযোগ রয়েছে এমন তথ্যও সামনে এসেছে।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গতকাল বিকেল থেকে মাদ্রাসার শরীয়ত উল্লাহ হলের ১০০৪ নম্বর রুমে রাতুলকে আটকে রেখে মারধর করে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্রসংসদের নেতৃবৃন্দ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাতুলকে উদ্ধার করে হোস্টেল সুপারের কক্ষে নিয়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
খবর পেয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং রাতুলকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তবে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময়ও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা রাতুলকে মারধর করে, এতে রাতুলের মাথায় আঘাত লেগে রক্তপাত হয়।
ঘটনার সময় তা’মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (টাকসু) ভিপি ইকবাল কবির, জিএস সাইদুল ইসলাম সহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
মাদ্রাসার আলিম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ জানান, রাতুল মেসেঞ্জারে ‘জুলাই’ বিরোধী একটি গ্রুপ খুলে অশালীন মন্তব্য এবং উস্কানিমূলক পরিকল্পনা করছিল। এসব বিষয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি, তাই তারা রাতুলকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।
অভিযুক্ত রাতুলের মা নুরজাহান ইসলাম বলেন, “আমার ছেলে ছোট, মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সে না বুঝে কিছু করে থাকতে পারে। ওকে মারধর না করে বুঝিয়ে বলা যেত।"
ঘটনার বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, “পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ছিল। আমরা সময়মতো উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। ঘটনার পেছনের কারণগুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তা’মীরুল মিল্লাত টঙ্গী হোস্টেল সুপার এবং শৃঙ্খলা বিভাগের প্রধান মাওলানা নূরুল হক বলেন, “ঘটনা সম্পর্কে জানার পর থেকেই আমরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছি এবং আমাদের দায়িত্বে রাতুলকে টঙ্গী থানায় হস্তান্তর করেছি।”
তবে এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিফজুর রহমানের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।