প্রতিবেদক - মির্জা নাদিম //
টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের বিদায় উপলক্ষে সোমবার (৩০ জুন) কলেজ ক্যাম্পাসে এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কলেজ প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ৯টায় অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতার সূচনা ঘটে। এরপর কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বিদায়ী অধ্যক্ষকে। কলেজের বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারাও অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামকে ক্রেস্ট ও ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানান।
দীর্ঘ এক দশক কলেজের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পর সরকারি নিয়মে বিদায় নিচ্ছেন অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম। তার বিদায়ী অনুষ্ঠান ঘিরে কলেজজুড়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানে কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন কলেজের বিভাগীয় প্রধান,কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, “যে শিক্ষককে সম্মান করে না, আমি তাকে ঘৃণা করি। যে সচিব বা মন্ত্রী শিক্ষককে নাম ধরে ডাকে, তার প্রতিও আমার ঘৃণা আছে। কারণ শিক্ষক হচ্ছেন জাতির বিবেক, তার সম্মানের সাথে কারো তুলনা চলে না।”
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি জানান, “একবার বদলির আবেদন নিয়ে আমি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। তখন তিনি আমাকে না চিনে ফিরিয়ে দেন। পরে পরিচয় দিলে কাজ হয়। একজন শিক্ষক হিসেবে নয়, সাংবাদিক হিসেবে আমি মূল্যায়ন পেলাম—এটা আমার ব্যক্তিগত নয়, জাতির জন্যই লজ্জার।”
তিনি আরও বলেন, “রফিকুল ইসলাম শুধু আমার সহপাঠী না, সে একজন আলোকিত মানুষ। তার সঙ্গে কাটানো সময় আমার জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
অনুষ্ঠানে বিদায়ী অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের জীবনীভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তার স্ত্রী এবং তার কন্যা প্রজ্ঞা। কন্যা প্রজ্ঞা বাবা রফিকুল ইসলামের কর্মময় জীবনের নানা দিক তুলে ধরে বলেন, টঙ্গী সরকারি কলেজ যেন আমার বাবাকে মনে রাখেন। বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন এটাই চাওয়া। এবং আমার বাবা রফিকুল ইসলাম সম্পর্কিত কলেজে কোন আলোচনা হলে তাকে যেন সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয়।
বিদায়ী বক্তব্যে অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, “কাল সকালে আর এই কলেজে আসা হবে না। ড্রাইভারকে ডেকে বলতে হবে না গাড়ি বের করতে। বেশ কয়েকদিন ধরে কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বিদায়ী সংবর্ধনা ভালোবাসা দিয়ে আমাকে ঋণী করেছে।আমি আগেই সবার কাছে ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয় সবাই আবারও আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। এই কলেজকে একটু একটু করে ছোট থেকে বড় হতে আমি দেখেছি।
এই কলেজের প্রেমে পড়ে আমি দীর্ঘ ১০ বছর কাটিয়েছি। ছাত্রনেতারা এবং ছাত্রসমাজ আমাকে কলেজ উন্নয়নে আন্তরিক সহযোগিতা করেছে। আজকের এই দিনের জন্য সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি কলেজের উপাধ্যক্ষ ফারজানা পারভীন বলেন, “আমিও আর মাত্র ছয় মাস আছি। এরপর আমিও স্যারের মতোই বিদায় নেব। সকলে স্যারের জন্য দোয়া করবেন। এই কলেজের মান উন্নয়নে স্যারের অতুলনীয় অবধান রয়েছে।
কলেজের অডিটোরিয়াম হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি সাবেক শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।