মিল্লাত হাসান,(মিঠাপুকুর) রংপুর প্রতিনিধি
সরকারি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের নাম শুনলেও সাধারণ মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য ছুড়ে দেন হরহামেষাই। তবে এরমধ্যে অনেক ভালো কর্মকর্তাও রয়েছেন। যাদের দক্ষতা, মার্জিত ব্যবহার, জনমূখী কর্মকান্ড, পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন, ন্যায় পরায়ণতা ও সেবা গ্রহিতাদের কথা ধৈর্য্যের সাথে শ্রবন করে সমাধান বের করে দেওয়া, গন্ডির বাইরে গিয়েও বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত রেখে চলেছেন প্রতিনিয়ত।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, প্রতিভা কোনো সীমাবদ্ধ সিদ্ধিতে সন্তুষ্ট থাকে না, অসন্তোষই তার জয়যাত্রা পথের সারথী। এটাই সত্য একজন কর্মদক্ষ, ন্যায় পরায়ণ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা পারেন দক্ষতার মাধ্যমে একটি উপজেলার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে। এমনই একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হলেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ৫ আগষ্টের পর নানাবিধ কারনেই মাঠ প্রশাসনে কাজের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সামলানোর পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি’র পদে থাকার কারনে নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাজের পরিধি আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কাজের চাপ বৃদ্ধি পেলেও এ উপজেলার নাগরিক সেবার মান একটুও কমেনি। বরং আগের চেয়ে সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুন।
নাগরিক সেবায় ইউএনও বিকাশ চন্দ্র বর্মণের সফলতা, বিগত ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন বিকাশ চন্দ্র বর্মণ। তিনি যোগদানের পর থেকেই সততা ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে গেছে এ উপজেলার নাগরিক সেবার চিত্র। পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকান্ডে ফিরে আসে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা।
অপরদিকে ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা দিলেও উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার মিঠাপুকুর উপজেলায় ছিলো ভিন্নরুপ। উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিএনপি, জামায়েত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ সহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে উপজেলার সার্বিক নিরাপত্তা, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন বিকাশ চন্দ্র বর্মণ। বিশেষ করে সরকার পতনের সুযোগে একটি শ্রেণী দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছিলো। সেই প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ন্যায্যমূল্যের বিপনণ কেন্দ্র ও কৃষি কর্নার স্থাপন করেন। যা উপজেলার সর্বত্র সুনাম অর্জন করে।
জনগণের স্বাস্থ্য সেবা সমুন্নত রাখতে প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে সকল প্রকার মেডিকেল টেস্টের ন্যায্য মূল্যে দৃশ্যমান স্থানে নিশ্চিতকরণ এবং জনসাধারনের স্বাস্থ্যের যাতে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রতিটি ফার্মেসিতে ফুলকোর্স ও রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শপত্র ব্যতীত সকল প্রকার এন্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধকরণ করেন। পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে অপরিষ্কার খাল-নালা পরিষ্কারকরণ ও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। এছাড়াও নির্মল পরিবেশ ও সবুজায়ন নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জুলাই বিপ্লব বিতর্ক প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করে। তরুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন এ উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এছাড়াও এ উপজেলাকে একটি আধুনিক পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি ও তরুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। সে হিসেবে যেখানেই চাকুরী করেছি সব সময় নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নাগরিকদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, যেদিন এ উপজেলায় যোগদান করেছি। সেদিনই বলেছি এ উপজেলা আমার। তাই আমার এ উপজেলার প্রতিটা নাগরিককে শতভাগ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যতদিন এ উপজেলায় রয়েছি ততদিন এভাবে সেবা প্রদান করতে চাই। পাশাপাশি উপজেলাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে মিঠাপুকুরকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, আমাদের বর্তমান সরকারের যে নির্দেশনা। সে নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ের অফিসারদের নির্দেশনা দিয়েছি। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জনমানুষের সেবা করার জন্য। পাশাপাশি যেসকল উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা বিভিন্ন স্কুলের দায়িত্বে রয়েছেন তারা অত্যন্তু সুন্দর ভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সকলের সহযোগিতায় সরকারি সেবা জনমানুষের দোড়গোড়ায় নিয়ে যেতে পারবো।
Leave a Reply