সারোয়ার হাসান সজীব, জাবিপ্রবি প্রতিনিধি।
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবিপ্রবি) জুলাই -আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গঠিত “জাবিপ্রবি গণতদন্ত কমিশন” এর উদ্যোগে তিন পর্বের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, যৌন হয়রানি, চাঁদাবাজি এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এই গণশুনানিগুলো অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানির প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় রবিবার (১৮ মে) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের লবিতে। এতে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য ও গণতদন্ত কমিশনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, রেজিস্ট্রার ও কমিশনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ নূর হোসেন চৌধুরী, এবং অন্যান্য কমিশন সদস্যরা। গণশুনানিতে শিক্ষার্থীরা সরব হয়ে নানা মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ পেশ করেন এবং বিচার দাবি করেন।
গণশুনানির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয় হলভিত্তিক। বিকেল ৫টায় ছাত্রী হলের প্রাঙ্গণে এবং সন্ধ্যা ৭টায় ছাত্র হলের ডাইনিংয়ে পৃথক দুটি গণশুনানির আয়োজন করা হয়। আবাসিক শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁরা মৌখিক ও লিখিতভাবে তাঁদের অভিজ্ঞতা, ক্ষোভ ও অভিযোগ তুলে ধরেন। শুনানিতে শিক্ষার্থীরা ৫ আগস্ট এবং তার পূর্বে হলে সংঘটিত বহুবিধ অন্যায়, নিপীড়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার, বৈষম্য এবং হয়রানির কথা তুলে ধরেন। অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষক ও ছাত্রনেতারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হুমকি দিয়েছেন, নিপীড়ন করেছেন এবং আন্দোলনে বাধা দিয়েছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, গণশুনানিতে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ চলাকালীন সময়ের ঘটনাবলী ঘিরে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, এ সময় কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আন্দোলনের বিরোধিতা করেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রকাশ্যে ও গোপনে ভয়ভীতি দেখান, সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেন এমনকি হত্যার হুমকিও দেন। এসব আচরণ শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। অনেকেই চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন এবং হল ছাড়তে বাধ্য হন।
শুনানিতে এসব ব্যক্তির নাম-পরিচয়সহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগপত্র পেশ করেন শিক্ষার্থীরা। অভিযোগগুলোতে বলা হয়, এসব ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিঘ্নিত করেছেন এবং প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে দীর্ঘদিন ধরেই এক ধরনের দখলদারিত্ব চালিয়েছেন।
গণতদন্ত কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রাপ্ত অভিযোগগুলো পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করবে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে।
গণশুনানিতে অংশ নেওয়া ইইই বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসরুর জামান মোল্লা বলেন, “আমরা চেয়েছি ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে। দীর্ঘদিন ধরে যেসব অন্যায়, বৈষম্য আর হয়রানির শিকার হয়েছি, তা অবশেষে আমরা প্রকাশ্যে তুলে ধরতে পেরেছি। এখন চাই—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এসব অভিযোগের সঠিক তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।”
এই গণশুনানিকে শিক্ষার্থীরা একটি ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখলেও, তাঁরা মনে করছেন বিচার না হলে এই আয়োজন শুধুই লোক দেখানো হবে। তাই তাঁরা এই প্রক্রিয়ার সার্বিক স্বচ্ছতা ও দ্রুত বাস্তবায়নের উপর জোর দিচ্ছেন।