(মোঃ রাহাদ আলী সরকার - মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিনিধি)
গত ১৬মে,দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়েছিলো।তবে উড্ডয়নের কিছুক্ষন পরেই বিমানটির পিছনের একটি চাকা (বাম পাশের ল্যান্ডিং গিয়ার) খুলে পড়ে যায়।তবে পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিমানটিকে প্রথমবারই সফলভাবে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।
শিশুসহ ৭১ জন যাত্রী নিয়ে উড়তে থাকা বিমানটির অবতরণের আগের কিছুক্ষণ ছিলো কিছুটা ভীতিকর ও উত্তেজনাপূর্ণ।দুপুর ২ টা ১৯ মিনিটে যখন বিমানটিকে ঢাকার আকাশে দেখা যায় তখন পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সাথে অবতরণের বিষয়ে কথা বলেছিলো।
শেষের এই ৩-৪ মিনিট কি কথা হয়েছিলো পাইলট ও এটিসির মধ্যে?সে বিষয়ে একটি অডিও পাওয়া গেছে।
বিমানটিকে ঢাকার আকাশে দেখা মাত্রই এটিসি থেকে জানানো হয়,আপনি কি এই অবস্থায় রানওয়ে ১৪ দিয়ে বিমানটিকে অবতরণের বিষয়টি কনফার্ম করেছেন?
পাইলট বলেন,কনফার্ম (হ্যা নিশ্চিত করেছি)
পাইলটের কনফার্মেশন পাওয়ার পর এটিসি থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাইলটকে জানানো হয়, ‘রানওয়ে ১৪ অবতরণের জন্য প্রস্তুত আছে। আপনি অবতরণ করতে পারেন।’
এটিসির সর্বশেষ বার্তা পাওয়ার ৯০ সেকেন্ড পর দুপুর ২টা ২২ মিনিটে বিমানের ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করে।
এসময় আগে থেকেই ফায়ার সার্ভিস,চিকিৎসা সামগ্রী, বিমানের কর্মী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিলো
বিমানের ফ্লাইটটি পুরোপুরি রানওয়েতে থামার পর এটিসিকে ক্যাপ্টেন জামিল বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আমরা নিরাপদে অবতরণ করেছি। কন্ট্রোল টাওয়ারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের সহযোগিতা ছিল প্রশংসনীয়।’
টাওয়ার থেকে আবারও বলা হয়, আপনি কী কনফার্ম করছেন আপনি নিরাপদে অবতরণ করেছেন?
পাইলট জানান, ‘হ্যাঁ, আমি আবারও নিশ্চিত করছি।’
টাওয়ার থেকে আবারও জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি কী কনফার্ম করছেন সবকিছু একেবারে স্বাভাবিক রয়েছে?’
ক্যাপ্টেন জামিল বলেন, ‘এভ্রিথিং ইজ অ্যাবসোলুটলি ফাইন (সবকিছুই অনেক ভালো আছে)।’
টাওয়ার বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ধন্যবাদ আপনাকে।’
ক্যাপ্টেন জামিল বলেন, ‘আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের এটিসিকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাবেন।’
এটিসি থেকে পাইলটকে বলা হয়, ‘আপনার বার্তাটি কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পৌঁছে দেওয়া হবে। আপনি ট্যাক্সিওয়েতে অবস্থান করুন।’
ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণের পর রানওয়ের চারপাশে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অধিকাংশই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে তালি দিতে থাকেন।
এবিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত পাইলট বিমানবন্দরে চারপাশে চক্কর দেয় এবং কিছুটা তেল পুড়িয়ে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিমানের পাইলট তেল না পুড়িয়ে প্রথম চেষ্টায় অবতরণ করতে চান। এতে আগুন লাগার কিছুটা সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ফায়ার সার্ভিস সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বলছে,ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ ও তার ক্রুদের অসাধারণ দক্ষতায় বিমানটি সফলভাবে অবতরণ করেছে।
কি কারণে এরকম পরিস্থিতি হলো সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে।