র,প,ই প্রতিনিধি:শরিফ মন্ডল
একদিকে যান্ত্রিক জীবনের পাঠ, অন্যদিকে প্রকৃতির জীবন্ত নিদর্শন—দুটোর চমৎকার সমন্বয় দেখা গেল রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত এই ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের একটি সার্কিট বোর্ডেই আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পাখি — দোয়েল। প্রযুক্তি শিক্ষার এই পবিত্র অঙ্গনে দোয়েলের এমন আশ্রয় ও সংসার গড়া যেন প্রকৃতির প্রতি এক অনাবিল শ্রদ্ধার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
দেখা গেছে, একটি পরিত্যক্ত সার্কিট বোর্ডের ভিতর মমতাময়ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে দোয়েলের বাসা। পাখি দুটি সেখানে জন্ম দিয়েছে চারটি ছানার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখি মা ও বাবা পালা করে খাবার নিয়ে আসছে বাচ্চাগুলোর জন্য। প্রতিবার তারা প্রতিটি ছানাকে আলাদাভাবে খাওয়াচ্ছে, যেন তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ আর ভালোবাসার এক নিখুঁত সমন্বয় কাজ করছে।
ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্লাস চলাকালীনও পাখির ছানাগুলোর কিচিরমিচির শব্দে তাদের মন জুড়িয়ে যায়। কেউ কেউ সেই সুরে বিমোহিত, কেউ আবার শ্রদ্ধায় নীরবে শুনে যায়। শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে বিস্ময় আর ভালোবাসার ছাপ স্পষ্ট।
এই ব্যতিক্রমী দৃশ্য নিয়ে অনুভূতি জানাতে গিয়ে রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল বিভাগের ৩য় পর্বের শিক্ষার্থী মাসুদ মিয়া বলেন, “আপনি যদি প্রকৃতিকে অনুধাবন করতে পারেন, তবে স্রষ্টার অস্তিত্ব ও মমতা আপনার হৃদয়ে অনুভব করবেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন: ❝তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের ঊর্ধ্বদেশে পাখিকুলের প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? পরম দয়াময়ই তাদেরকে স্থির রাখেন। নিশ্চয় তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।❞ (সুরা মুলক: আয়াত ১৯)”।
তিনি আরও বলেন, “এই ছোট ছোট প্রাণীগুলোর প্রতি সদয় হওয়া, তাদের সঙ্গে সহাবস্থান গড়ে তোলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রকৃতিকে ভালোবাসার মধ্যেই নিহিত রয়েছে স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসা।”
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা দোয়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্কিট বোর্ডটি আলাদা করে চিহ্নিত করে রেখেছেন, যেন কেউ অসাবধানতাবশত তাদের ক্ষতি না করে। বিষয়টি নিয়ে ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও প্রশাসনও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
প্রযুক্তি শিক্ষার এমন এক কেন্দ্রে জাতীয় পাখির বাসা গড়া নিঃসন্দেহে একটি অনন্য বার্তা বহন করে। এটি যেমন শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে, তেমনি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—প্রকৃতি আর প্রযুক্তি একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং তারা সহাবস্থানে পারে এক নতুন মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে।
আমরা চাই, এমন উদ্যোগ ও অনুভূতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। আসুন, আমরা প্রকৃতিকে ভালোবাসি, পরিবেশ ও প্রাণিকুলের প্রতি সদয় হই, এবং গড়ে তুলি একটি মানবিক, সুশৃঙ্খল ও সহানুভূতিশীল সমাজ।