ববি প্রতিনিধি:
আজ (মঙ্গলবার, ১৩ মে) বিকাল ৫টায় পূর্বঘোষিত আল্টিমেটাম শেষ হলেও উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গ ব্লকেড কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবরোধ গড়ে তোলেন। সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন ও ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। সোমবার (১২ মে) রাত ১১টা থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী এই অনশন শুরু করেন। মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুর পর্যন্ত ১৮ ঘণ্টা অতিক্রম করলেও রাষ্ট্রপক্ষ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে আরও তিনজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি বিভাগে ভর্তি করতে হয়। দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মো. তানজিন হোসাইন জানান, “টানা অনশনে,পানিশূন্যতা ও অতিরিক্ত গরমের কারণে তাদের রক্তচাপ কমে গেছে। তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।”
অনশনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ভিসি পদত্যাগ না করা অবধি তারা অনশন ভাঙবেন না। তারা আরও বলেন, প্রয়োজনে জীবন দিয়েও তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। অনশনরত শিক্ষার্থী ওয়াহিদুর রহমান বলেন,
"শূচিতা শরমিনের পদত্যাগ না হলে, আমার কফিন এখান থেকে যাবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজ আশরাফুল হক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বলেন, "২৮ দিন যাবত শিক্ষার্থীরা একজন স্বৈরাচার উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছে। তাকে অপসারণে রাষ্ট্রপক্ষের কী ধরনের বাধা রয়েছে, তা বোধগম্য নয়।"
মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন,
"আমরা গতকাল আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু স্বেচ্ছাচারী ভিসি পদত্যাগ করেননি, এমনকি রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ভাইয়েরা মৃত্যুর সাথে লড়ছে। তাই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি—এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়ক থেকে উঠবো না।"
সর্ব শেষ তথ্য মতে, চলমান আন্দোলনের মধ্যেই বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর, শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষক, আইকিউএসি’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, গেস্ট হাউজের পরিচালকসহ মোট ৯ জন শিক্ষক বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।
এর আগে, ৪৬ জন শিক্ষক এক যৌথ বিবৃতিতে আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং উপাচার্যকে অপসারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।