সুবংকর রায়, ইবি প্রতিনিধি:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে গণহত্যাকারী, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচার দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের খবরে আনন্দ মিছিল করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক জিয়া মোড়ে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় মূল ফটকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী, ইয়াশিরুল কবীর, সাজ্জাতুল্লাহ শেখ, নাহিদ হাসান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান, খেলাফত ছাত্র মজলিশের সভাপতি সাদেক আহমেদসহ আরো কয়েকশত শিক্ষার্থী।
আনন্দ মিছিলে শিক্ষার্থীরা নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার; খুনি লীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশান; এই মুহূর্তে খবর এল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো; যমুনা থেকে খবর এল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো; আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; ইনকিলাব জিন্দাবাদ; দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা; লীগ ধর, জেলে ভর ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে শিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, "এই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পরেই ভারতের তাবেদারি করার জন্য আমার সেনাবাহিনীর ভাইদের হত্যা করেছিল। বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাড় করাতে চাওয়া নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। তারা বিভিন্ন সময় আমাদের দেশের মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে। শাপলা চত্বরে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আমার ভাইদের হত্যা করেছে। যারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদের কখনোই সহ্য করতে পারেনি। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।"
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, "জুলাই অভ্যুত্থানের পরেই আমাদের দাবি ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। দীর্ঘ একটি সময় পেরিয়ে গেলেও অবশেষে আমাদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে। এখন বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত আওয়ামী লীগকে সর্বোতভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। শহীদ আবু সাইদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, ওসামার এই বাংলায় আমরা আর কোন কালো হাত সহ্য করবো না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের ভাইদের রক্তের বদলা এই ইন্টেরিমকে নিতে হবে।"
ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, "জুলাই অভ্যুত্থানের ৯ মাস পরে আরেকটা বিষয় প্রতীয়মান হয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষ যা বলবে সরকার তা করতে বাধ্য। বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে আগামী বাংলাদেশের কোন পথে যাবে। বাংলাদেশের ছাত্রজনতা যে ম্যানডেট দিবে সেই পথেই আগামী বাংলাদেশ চলতে বাধ্য। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে যারা আন্দোলনে ছিলেন না তাদের বলতে চাই, রাজনৈতিক ভাবে মানুষ ভুল করে, আমরা তা ভুলে যেতে চাই। আগামীতেও আপনারা যদি ভুল করেন, আওয়ামী লীগের যে অবস্থা হয়েছিল আপনাদেরও সেই অবস্থা হবে। জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিপ্লবীদের জীবন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। ঘোষণাপত্র দিতে ৩১ কার্যদিবস হলেও আমরা আন্দোলনে নেমে পড়ব৷"
প্রসঙ্গত, অভ্যুত্থানের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।