রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরের বদরগঞ্জে ঢেউটিন ব্যবসায়ীর দোকানে ঢুকে হামলা, ভাংচুর ও ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করে টাকা লুটের ঘটনায় এক মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ থানায় মামলা নেয়নি। বরং ওই ব্যবসায়ীকে হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। তিনি পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগচ্ছেন। এমন অভিযোগ তুলে ৬ মে মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে রংপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম। তিনি বদরগঞ্জ পৌর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ঢেউটিনের ব্যবসা করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তিনি শহীদ মিনার এলাকায় ইশতিয়াক আহমেদ বাবু নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে একটি দোকান ও তিনটি গোডাউন ঘর ভাড়া নেন। ভাড়ার মেয়াদ আছে ২০২৮ সাল পর্যন্ত। ওই সময় থেকে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে তিনি টিনের ব্যবসায় পরিচালনা করে আসছিলেন। এরেই মধ্যে দোকান ভাড়ার জামানত বাবদ ইশতিয়াক দুই দফায় আরও ১৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা নেন। এরপর জামানতের টাকা ফেরত না দিয়ে ইশতিয়াক ও তাঁর ভগ্নিপতি মনিরুজ্জামান ওই ব্যবসায়ীকে দোকান ঘর ছেড়ে দিতে বলেন।
জাহিদুল বলেন, আমার জামানত ৩১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা দোকানের জামানত দেওয়া আছে। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে দোকানের চুক্তির মেয়াদ আছে ২০২৮ পর্যন্ত। আমার জামানতের টাকা ফেরত না দিয়ে ইশতিয়াক আমাকে দোকান ছাড়তে চাপ দেন। এ নিয়ে কয়েকবার সালিস বৈঠকও হয়। পরে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার লোক পাঠিয়ে আমাকে দোকান ও গোডাউন ঘর ছাড়তে বলেন। তাঁর কথা না শোনায় গত ২ এপ্রিল দুপুরে ইশতিয়াক ও মনিরুজ্জামান কিছু লোকজন নিয়ে দোকানে এসে সন্ধ্যার মধ্যে দোকান ছাড়ার জন্য আমাকে হুমকি দিয়ে যান। বিষয়টি আমি বদরগঞ্জ থানার ওসিকে অবহিত করি। নিজের ও দোকানের নিরাপত্তার কথা ভেবে এদিন সন্ধ্যার পরে থানায় গেলে সেখান থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আমার সঙ্গে দোকানে আসেন। এর পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির বহিস্কৃত নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপির আরেক বহিস্কৃত নেতা হুমায়ুন কবীরসহ সাঙ্গপাঙ্গদের লাঠি ছোরা বল্লমসহ আমার টিনের দোকানে পাঠিয়ে দেন। তাঁদের সঙ্গে দোকান মালিক ইশতিয়াক আহম্মেদ বাবু ও তাঁর শ্যালক মনিরুজ্জামানও ছিলেন। এসময় তাঁরা জোরপুর্বক আমার দোকানে ঢুকে পুলিশের উপস্থিতিতেই আমাকেসহ দোকানের কর্মচারিদের এলোপাতাড়ি মারপিট করেন। এক পর্যায়ে একজন সন্ত্রাসী আমার ডান পায়ের উরুতে ছুরিকাঘাত করেন। এতে আমার পা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। পরে সন্ত্রাসীরা আমার দোকানে ভাঙচুরসহ ক্যাশ বাক্সে থাকা সারাদিনে টিন বিক্রির প্রায় চার লাখ টাকা লুটিয়ে নেন। এসময় আমার ও কর্মচারিদের আত্মচিৎকারে আশে পাশে থাকা লোকজন ছুটে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যান। ঘটনার সময়ে উপস্থিত থাকা পুলিশ সদস্যরা তখন নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করেন। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বদরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
জাহিদুল অভিযোগ করে আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা ওই সময়ে আকস্মিকভাবে পুলিশের উপস্থিতিতে আমার দোকানে হামলা মারপিট ও লুটপাট করায় আমি ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিক ঘটনাটি স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সারোয়ার জাহান মানিক ও আরেক ব্যবসায়ী কালুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শহিদুল হক মানিককে জানাই। পরদিন ৩ এপ্রিল তাদের পরামর্শে আমি হামলা ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেই। কিন্তু পুলিশ আমার এজাহার থানায় মামলা আকারে গ্রহন করেনি। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী নেতারা গত ৫ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় মানববন্ধনের প্রস্ততি নিলে মোহাম্মদ আলী সরকারের নির্দেশে তাঁর বাসা থেকে ইশতিয়াক বাবু , তার ভগ্নিপতি মনিরুজ্জামান ও হুমায়ুন কবীর ওরফে ডিস মানিক এবং লাভলু মিয়া প্রকাশ্যে হাতে লাঠি, ছোরা, বল্লম সহ সন্ত্রাসী বাহিনী সাথে নিয়ে এসে প্রতিবাদ সমাবেশের ব্যানার ফেস্টুন টেবিল চেয়ার এবং মাইক ভেঙ্গে চুরমার করেন। এ সময় তারা মানববন্ধন করতে আসা অনেক ব্যবসায়ীকে মারপিট করে আহত করেন। পরে সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ীদের পক্ষে থাকা বিএনপি নেতা কালুপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিকের বদরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থিত কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেন এবং তাকে ধাওয়া করেন। পরে লাভলু আহত হয়ে চিকিৎসাধীণ অবস্থায় ওইদিন বিকেলে মারা যান।
সংবাদ সম্মেলনে জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘বদরগঞ্জ থানা পুলিশ যদি ৩ এপ্রিল আমার ওপর হামলা ও দোকান ভাংচুরের মামলা নিত তাহালে ৫ এপ্রিল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতো না। এর দায় থানা পুলিশ ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার এড়াতে পারেন না।’ তাঁর অভিযোগ, পুলিশ তাঁর মামলা না নিলেও ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় তাঁর নামে দু’টি মামলা হয়েছে। তিনি পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগচ্ছেন। ওই ঘটনায় তিনি পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানান।
তবে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, ‘ওই দোকানে হামলার ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। লাভলু বিএনপির সক্রিয়কর্মী ছিলেন। তাঁকে ৫ এপ্রিল প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটা কে করেছে বদরগঞ্জবাসী তা দেখেছে।’
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আতিকুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন রিসিভ করেন থানার পরির্দশক (তদন্ত) নুরুল আমিন। তিনি বলেন, ‘ওসি বাইরে আছেন। ওই ব্যবসায়ীর দোকানে হামলার ঘটনায় থানায় কেন মামলা নেওয়া হয়নি তা ওসি বলতে পারবেন’ বলে তিনি ফোন কেটে দেন।