মোঃআশিকুল ইসলাম
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ৯ম ব্যাচ শিক্ষার্থী জেবুন্নেসা হক জিমি বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে চিকিৎসারত অবস্থায় আনুমানিক রাত ১১.৪০ মিনিটে পাকস্থলী ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে জিমির সহপাঠীরা।
গত ১৮ই ডিসেম্বর ২০২৪ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বরাবর ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। ঐই পত্রে তিনি লিখেন,”মাননীয় ম্যাম, আমি জেবুন্নেছা হক জিমি, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৩য় বর্ষের (ভর্তি শিক্ষাবর্ষ: ২০১৯-২০) একজন নিয়মিত ছাত্রী।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ পাকস্থলী ক্যান্সারে আক্রান্ত। বর্তমানে আমার চিকিৎসা প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে এবং চিকিৎসা ব্যয়ের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপারেশন ও কেমোথেরাপির জন্য ইতোমধ্যে আমার পরিবারের ১০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সামনে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কেমোথেরাপির প্রয়োজন হবে। কিন্তু এই ক্রমবর্ধমান ব্যয় আমার পরিবারের পক্ষে বহন করা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় আমার জীবন এবং শিক্ষাজীবন বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্যের জন্য আপনার নিকট আবেদন জানাচ্ছি। আপনার সহানুভূতিশীল দৃষ্টি এবং আর্থিক সহযোগিতা আমার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে অত্যন্ত সহায়ক হবে এবং আমার জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অতএব, আপনার নিকট বিনীত অনুরোধ, বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে আমার চিকিৎসার জন্য যথাযথ আর্থিক সহায়তা প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আজ জিমি আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। জিমি, তার চিকিৎসার জন্য নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েও পাননি। আবেদন করার সত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-কল্যাণ তহবিল থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করেনি তাকে।
আবেদন করে কেন সহযোগিতা পাননি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ক্ষোভে প্রকাশ করেছে।
রসায়ন বিভাগের সাকিব আল হাসান লিখেন,” আমাদের সহপাঠী জিমি আজ আমাদের মাঝে নেই। জিমি চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিল। বারবার আবেদন করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসকের কাছে পৌঁছাতে পারেনি তার আর্তনাদ। তার সহপাঠীরা আবেদনপত্র জমা দিয়েছে, প্রার্থনা করেছে কিন্তু আমাদের সম্মানিত উপাচার্যের সময় হয়ে ওঠেনি আবেদন পত্রটি খুলে দেখার। সত্যি বলতে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে জিমি আমাদের মাঝে আর নেই।
ইংরেজী বিভাগের রাকিন খান লিখেন,” তিনি ভিক্ষা চান নি, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের ন্যায্য অধিকার চেয়েছিলেন। একটু খোঁজ নেয়ার প্রয়োজনও মনে করলো না! দূর দুরন্ত থেকে শিক্ষার্থীরা নিজ পরিবার ছেড়ে যাদের উপর আস্থা রেখে এখানে পড়তে আসে কিন্তু তাদের কাছে কোন মূল্যায়ন নেই। যাইহোক কিছু বললে আবার নানা ট্যাগ দেওয়া হবে যা হয় হোক কোন রকম সম্মান টা শেষ করলেই বাঁচি।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের রাকিবুল হাসান সাকিব লিখেন,”স্রেপ ভিসির একটা স্বাক্ষরের জন্য যাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম সাহায্য করা সম্ভব হয়নি! ক্যান ইউ ইমাজিন? একটা স্বাক্ষরের জন্য একজন মৃত্যু পথ যাত্রী মানুষ সাহায্যটুকু পেলো নাহ! কালকে আপনিও মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারেন, হতে পারে আপনার পরিবারের সেই রোগের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্যটুকুও নেই! কিন্তু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন এতবড় একটা জায়গা থেকেও আপনি নূন্যতম সাহায্য পাবেন না এটা ভাবতে কী অবাক লাগে না?আমাদের রাজ্যের মহারানী এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে, ভুক্তভোগীর আবেদনপত্র কয়েকবার দাখিল করে তার স্বাক্ষর পাওয়ার আগেই পরপারে পাড়ি জমাতে হয়!
বিশ্ববিদ্যালয় যদি সাহায্য না করতে পারে।আইন কিংবা অন্যকোনো কারণে সেটাও অন্তত জানানো উচিত! কিন্তু এমন স্পর্শকাতর একটা ইস্যুতেও যদি সেচ্ছাচারিতার প্রমান দেয় তথাকথিত অভিভাবকরা তবে ধিক্কার তাদের প্রতি।”
ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের রবিউল ইসলাম লিখেন,”জিমির চিকিৎসার জন্য উপাচার্য বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করা হইছিলো।
উপাচার্যের দফতর থেকে দেওয়া প্রতিটি তারিখে গিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হইছে, এযাবৎ কোন পজিটিভ রেসপন্স পাই নি।বরং এই নিয়ে, সেম অ্যাপ্লিকেশন ৩ বার সাবমিট করা হইছে।
কোন প্রয়োজনের সময় উপাচার্যকে না পাওয়া যায়, তাকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কিংবা ছাত্রদের আসলে লাভ কি? যার বিরোদ্ধে স্বাধীনভাবে কথা বলা যাবে না, মুখ খুললেই মামলা, জিডি তার জন্য এত দরদ কেনো ভাই?পরিশেষে, সবাই আমার ফ্রেন্ডের জন্য দোয়া করবেন।”
Leave a Reply