নিজস্ব প্রতিবেদক:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নারী শিক্ষার্থীদের একমাত্র আবাসিক হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান প্যানেলের জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কুবরা টাকা এবং এজিএস প্রার্থী ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য মোঃ আতিকুর রহমান তানজিল চকলেট বিতরণ করেন। যা জকসু নির্বাচন আচরণ বিধি ১১ এর ঙ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) আনুমানিক রাত ১১টার দিকে হলের ভেতরে এই ঘটনা ঘটে এবং বিষয়টি স্বীকারও করেছেন জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কুবরা।
টাকা দেয়ার সময়ের ধারণকৃও একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কালো জামা ও অফ-হোয়াইট হিজাব পরিহিত ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কুবরা হল সংসদ নির্বাচনের জিএস প্রার্থী সাদিয়া সুলতানা নেলির উপস্থিতিতে হলের ছাত্রীদের তালিকা অনুযায়ী ৩ হাজার টাকা প্রদান করেন। এছাড়াও হলের একাধিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদলের প্যানেলের এজিএস প্রার্থী তানজিল শিক্ষার্থীদের মাঝে চকলেটসহ বিভিন্ন উপঢৌকন বিতরণ করেন।
জকসু নির্বাচন আচরণ বিধি ১১ এর ঙ তে স্পষ্ট বলা হয়েছে, "ভোটারগণকে কোনোরকম পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনোরূপ উপঢৌকন প্রদান করতে পারবেন না।"
এদিকে বৃত্তির নামে নির্বাচনের দুই দিন আগে হলের মেয়েদের ৩ হাজার করে টাকা বিতরণের বিষয়টি স্বীকার করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী ও যুগ্ম আহ্বায়ক খাদিজাতুল কুবরা বলেন, "আপনি আমাকে সবকিছু প্রমাণসহ পাঠান। আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম মেধাবৃত্তি বা শিক্ষা বৃত্তি দিবো, সেই অনুযায়ী দিয়েছি। এটা যদি অপসংস্কৃতি ছড়ানো হয় তাহলে এখানে তো কিছু বলার নাই আসলে। পূর্বঘোষিত ছিলো। আমরা নতুন করে কিছু করিনি। টাকা দিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, এটার প্রমাণ তো আপনি পেয়েছেনই ভাই।
এছাড়াও জকসু নির্বাচনের ঠিক কয়েক দিন আগে এভাবে সরাসরি অর্থ বিতরণের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খাদিজাতুল কুবরা কোনো সদুত্তর না দিয়ে কল কেটে দেন।
এ বিষয়ে এজিএস পদে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য আতিকুর রহমান তানজীল বলেন, "তিনি নিজে এমন কোনো কাজ করেননি। তবে পরে জানতে পারেন, তাঁর কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ছাত্রী হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে চকলেট বিতরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়ে থাকলে সে বিষয়ে তাঁর করার কিছু নেই।"
এসময় খাদিজা হলের মেয়েদের টাকা দেয়ার সময় প্যানেলের ও ভিপি পদপ্রার্থী রাকিবের পক্ষেও ভোট চান। এবিষয়ে ভিপি পদপ্রার্থী রাকিব বলেন, আমি জানিনা বিষয়টা। আমার জিএস যদি দিতো তাহলে আমি জানতাম বিষয়টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যদি টাকা দিয়ে ভোট চাইতো তাহলে তারাই তো প্রতিক্রিয়া জানাইতো। এসময় নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রদলের বৃত্তি দেওয়া নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এটা আমি জানিনা। এটা তাদের (ছাত্রদলের) ব্যাপার। এব্যাপারে আমার ইন্টারফেয়ার করার রাইটস নাই।
এর আগে গত দুই দিনে মেধাবৃত্তির নামে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে শিক্ষার্থীদের স্টার কাবাব হোটেলে ডেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দেয়।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেলকে ফোন দিলে তিনি তাঁর সাথে সরাসরি দেখা করতে বলেন।
এদিকে জকসু নির্বাভনের আগে ছাত্রদল প্যানেলের টাকা দিয়ে ভোট কেনা, স্টারে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খাওয়ানো, বার্বিকিউ পার্টি করাসহ একাধিক আচারণ বিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন ছাত্র শক্তি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। আজ রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে এই দাবি জানান তারা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, "এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট দায়িত্ব আছে তাকে বলেন৷ আর আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।"
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট আঞ্জুমান আরা বলেন, "বিষয়টি আমি জানিনা এবং এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।