নিউজ ডেস্ক :
অমর একুশে বইমেলা সবার প্রাণের মেলা। ভাষা শহীদদের স্মরণে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এ মেলা শুধু বই কেনাবেচার স্থান নয়; বরং বাঙালির সাহিত্য, সংস্কৃতি, চিন্তা ও সৃজনশীলতার মিলনমেলা। প্রতিবছর বইপ্রেমী পাঠক, লেখক, প্রকাশক, গবেষক ও সাহিত্যপ্রেমীরা এই মেলার অপেক্ষায় থাকেন। তবে ২০২৫ সালের বইমেলার প্রথম দিন আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) চিরচেনা সেই উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি।
বইমেলা প্রাঙ্গণ, বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, একেবারে প্রাণহীন মনে হয়েছে। অধিকাংশ স্টলে বই নেই, তাকগুলো খালি। স্টল নির্মাণের কাজও শেষ হয়নি। ধুলাবালি উড়ে বেড়াচ্ছে, কোথাও কোথাও ইট-বালির স্তূপ পড়ে আছে।
উদ্বোধনী আয়োজনবিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে বইমেলার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। উদ্বোধনী মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক, গবেষক, প্রকাশক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
বিকেল ৩টায় রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে শিশু চত্বর। সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি স্টল সাজানো থাকলেও বেশিরভাগই ফাঁকা।
এরপর সামনে এগোতেই দেখা যায় মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির নিজস্ব স্টল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, রাজু ভাস্কর্যের প্রবেশপথের কাছেও বাংলা একাডেমির আরেকটি স্টল রয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, আয়োজক কমিটির এই দুটি স্টলেই এখনো বই ওঠেনি, নির্মাণকাজও চলছে।
মেলার বিভিন্ন প্রান্তে এখনো দেখা যাচ্ছে নির্মাণাধীন স্টল, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কাঠ, বাঁশ, ব্যানার, পোস্টার ও অন্যান্য উপকরণ। হাঁটার পথগুলোতে ধুলো উড়ছে, যা পাঠক ও দর্শনার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর।
ছায়া প্রকাশন, সন্দীপন প্রকাশন, সিয়ান পাবলিকেশন, দুয়ার প্রকাশনী, বাড কম্প্রিন্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, প্রজ্বলন প্রকাশ, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন, জোনাকী প্রকাশন—এমন কয়েকশো প্রকাশনার স্টলে বই ওঠেনি। অনেক স্টলদার খালি তাকের সামনে দাঁড়িয়ে সময় পার করছেন।
অন্যদিকে, হাতে গোনা কয়েকটি স্টলে বই উঠেছে। যেমন—ভাষাচিত্র, অনিন্দ্য প্রকাশ, অক্ষর বুনন, বিজ্ঞান একাডেমী, রাবেয়া বুক হাউস, প্রথমা প্রকাশন—এগুলোর স্টলে কিছু বই সাজানো হয়েছে। তবে মেলায় স্বাভাবিক প্রাণ ফেরাতে এতটুকু প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়।
এবারের বইমেলায় মোট ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি স্টল রয়েছে। মোট ইউনিট ১০৮৪টি। গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি এবং ইউনিট ছিল ৯৪৬টি।
এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি—বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩৬টি। গত বছরও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৭টি।
লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় অবস্থিত। এখানে প্রায় ১৩০টি লিটল ম্যাগাজিন স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শিশু চত্বরে মোট ৭৪টি প্রতিষ্ঠান এবং ১২০টি ইউনিট রয়েছে। গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৮টি, ইউনিট ১০৯টি।
বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। সাধারণ দিনে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না।
তবে ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত)। অন্যদিকে, ২১শে ফেব্রুয়ারি (মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
Leave a Reply